ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

দ্রুজ সম্প্রদায়, কারা এরা? কেন ইসরায়েল তাদের জন্য লড়ছে?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ১৬ জুলাই ২০২৫

দ্রুজ সম্প্রদায়, কারা এরা? কেন ইসরায়েল তাদের জন্য লড়ছে?

ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সুইদা শহরে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ৩০ জন নিহত এবং বহু আহত হওয়ার পর দেশটির সেনাবাহিনী দ্রুজ অধ্যুষিত এলাকায় প্রবেশ করে। এই ঘটনার পর ইসরায়েল সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালায়, যা সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ "সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে আখ্যায়িত করেছে।

প্রায় ১০ লাখ সদস্যবিশিষ্ট দ্রুজ সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ১১ শতকে মিশরে হলেও তারা মূলত সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলে বসবাস করে। সিরিয়ার সুইদা প্রদেশে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেখানে সম্প্রতি বেদুইন গোষ্ঠী ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে সিরিয়ার নতুন সরকার ইসলামপন্থী সমর্থিত বাহিনী দিয়ে হস্তক্ষেপ করে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

ইসরায়েল দাবি করছে, তারা সিরিয়ায় বসবাসকারী দ্রুজদের রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কারণ ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও প্রায় ১.৩ লাখ দ্রুজ নাগরিক রয়েছেন, যারা ১৯৫৭ সাল থেকে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োজিত। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর বলেছে, "সিরিয়ার দ্রুজদের ক্ষতি হতে দেওয়া হবে না, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।"

অপরদিকে, সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ দ্রুজ মিলিশিয়াদের নিরস্ত্রীকরণ ও সরকারের অধীনে আনা চাচ্ছেন, কিন্তু দ্রুজরা নিজেদের অস্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে চায়। রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বেও তারা বৈষম্যের অভিযোগ করছে।

সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরু হয় এক দ্রুজ ব্যবসায়ীর অপহরণকে কেন্দ্র করে, যার প্রতিক্রিয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অপহরণ ও সংঘর্ষ ঘটে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মরহাফ আবু কুসরা সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন এবং সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এদিকে, ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন করে পরোক্ষ সংলাপ শুরু হলেও একদিকে যেমন ইসরায়েল শান্তির বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে বারবার সিরিয়ার ভূখণ্ডে হামলা করে সেই শান্তি প্রচেষ্টাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ইসরায়েল চাইছে সিরিয়াকে 'আব্রাহাম অ্যাকর্ড'-এ যুক্ত করে মধ্যপ্রাচ্যে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে। তবে নেতানিয়াহু সম্প্রতি সিরিয়ার সরকারকে "চরমপন্থী ইসলামি শাসনব্যবস্থা" বলে অভিহিত করেছেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুলতে বলেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই জোড়ালো নীতিগত দ্বৈততা সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং বৃহত্তর কূটনৈতিক সমঝোতার পথে বড় বাধা হয়ে উঠছে। দ্রুজদের প্রতি ইসরায়েলের আনুগত্য নতুন সংঘাতের সম্ভাবনা যেমন তৈরি করছে, তেমনি এটি মধ্যপ্রাচ্যে ভবিষ্যতের সামরিক ও কূটনৈতিক সমীকরণকেও প্রভাবিত করতে পারে।

মুমু ২

×