ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

মো. তামিম হোসেন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ 

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ১৬ জুলাই ২০২৫

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের ‘বহিরাগত’ বলে ফেসবুকে মন্তব্য করার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। বুধবার (১৬ জুলাই) সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। অপরদিকে শিক্ষক পরিষদ একইদিন পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

বুধবার সকাল ১০টায় কলেজ মসজিদের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলটি শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবন, হৃদয়ে বাংলাদেশ ম্যুরাল, পরীক্ষা ভবন, অর্থনীতি ভবন ও কলা ভবনের চারপাশ ঘুরে কলা ভবনের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীরা “তুমি কে আমি কে, বহিরাগত বহিরাগত” সহ নানা প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন।

জানা গেছে, কলেজে চলমান একদফা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুল কুদ্দুস প্রথম ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের ‘বহিরাগত’ বলে স্ট্যাটাস দেন। এরপর অন্যান্য শিক্ষকও সে পোস্টে মন্তব্য করতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র শিবিরের সভাপতি মনির হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. জাহিদুল ইসলাম এবং ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক।

তাঁরা বলেন, গত এক বছরে আমরা ৯টি দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছি। কিন্তু তিনি শুধু তালবাহানা করেছেন। বলেছেন, তিনি অক্ষম। তিনি নিজেও জানেন না কেন এখানে এসেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, গত সোমবার ওই ৯ দফা দাবি নিয়ে কিছু সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ মো. আবুল বাসার ভূঁঞাকে কলেজ মসজিদে ঢুকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১১টায় কলেজের ডিগ্রি শাখার প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন কলেজের শিক্ষকরা। সেখানে বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক গাজী মুহাম্মদ গোলাম সোহরাব হাসান, বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মশিউর রহমান প্রমুখ।

শিক্ষকরা বলেন, অধ্যক্ষকে মসজিদে অবরুদ্ধ করা চরম ধৃষ্টতা। তাঁকে অন্যায়ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। এসব ঘটনার পেছনে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী রয়েছে যারা কলেজকে অস্থিতিশীল করতে চায়।

শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অধ্যক্ষ কোনো অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কিন্তু নিজ হাতে শাস্তি দেওয়ার মতো কোনো নিয়ম নেই।

বর্তমানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে কলেজের পরিবেশ চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেখানে অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করছেন, সেখানে শিক্ষকরা তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে অপমানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলছেন।

রসায়ন বিভাগের অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ ধরনের মুখোমুখি অবস্থান কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করছেন ক্ষুণ্ন। দ্রুত সমঝোতা না হলে শিক্ষা কার্যক্রম ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।

ফারুক

×