
ছবি: সংগৃহীত
স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনশায়ারের বালমোরাল এস্টেট ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রিয় অবকাশযাপনস্থল, সেখানেই লুকিয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য ইতিহাস। ঘন জঙ্গলের মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ১১টি রহস্যময় স্মৃতিস্তম্ভ, যেগুলোর একটি আবার বিশালাকৃতির গ্রানাইটে তৈরি পিরামিড। এগুলো শুধুই সৌন্দর্যের নিদর্শন নয়, বরং রাজপরিবারের প্রেম, শোক, ঐতিহ্য ও জাতি গঠনের নিরব দলিল।
১৮৪৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, রানি ভিক্টোরিয়া প্রথমবারের মতো পা রাখেন স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনশায়ারে অবস্থিত বালমোরাল এস্টেটে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য পাহাড়, বন এবং শান্ত নদীর মিলনে মুগ্ধ হয়ে তিনি তার ডায়রিতে লিখেছিলেন, “সবকিছু যেন শান্তি ও স্বাধীনতার নিঃশ্বাস নিচ্ছে এবং দুঃখ ভুলিয়ে দিচ্ছে।” এই এক সফরই তার জীবনের গতিপথ বদলে দেয়। এর চার বছর পর, ১৮৫২ সালে, তিনি ও প্রিন্স অ্যালবার্ট এই এস্টেট কিনে নেন এবং বালমোরাল হয়ে ওঠে ব্রিটিশ রাজপরিবারের বার্ষিক গ্রীষ্মকালীন আশ্রয়স্থল যা আজও সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
এই রাজপ্রাসাদ এবং আশপাশের বনজঙ্গল জুড়ে ছড়িয়ে আছে একাধিক স্মৃতিস্তম্ভ, যেগুলোকে বলা হয় “কেয়ার্ন”। এটি স্কটিশ ঐতিহ্যের অংশ, যা মূলত প্রাকৃতিক পাথর দিয়ে তৈরি স্তম্ভ। কেয়ার্নগুলো তৈরি হয়েছিল রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর স্মরণে, যেমন প্রিন্সেস অ্যালিস, অ্যানা, বিট্রিস বা প্রিন্স আর্থারদের বিয়ে, জন্ম বা প্রয়াণ। তবে এই সব কেয়ার্নের মধ্যে সবচেয়ে বিশাল এবং ব্যতিক্রমী হলো প্রিন্স অ্যালবার্টের জন্য নির্মিত পিরামিড-আকৃতির গ্রানাইট স্তম্ভটি। এটি ১৮৬২ সালে অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর রানী ভিক্টোরিয়া নিজ হাতে নির্মাণ করান এবং আজও এটি "স্কটল্যান্ডের গ্রেট পিরামিড" নামে পরিচিত। প্রায় ১১ মিটার উচ্চতার এই পাথরের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে ক্রেইগ অ্যান লারাচাইন নামের এক পাহাড়ের চূড়ায়, যেখানে পৌঁছাতে হলে দীর্ঘ বনপথ পেরিয়ে উঠতে হয়।
এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো শুধু ইতিহাস নয়, বরং রানী ভিক্টোরিয়ার ব্যক্তিগত প্রেম, শোক এবং স্কটল্যান্ডকে ঘিরে তাঁর রোমান্টিক কল্পনার পরিচয় বহন করে। এই সব কেয়ার্ন আজও বালমোরাল এস্টেটের অরণ্যে ছড়িয়ে আছে, যেন পাথরে লেখা এক নিঃশব্দ রাজকীয় ইতিহাস।
এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো শুধু রাজপরিবারের স্মৃতিচারণ নয়, বরং স্কটল্যান্ডকে ঘিরে গড়ে ওঠা রোমান্টিক এক ধারণারও প্রতিচ্ছবি। স্কটিশ ইতিহাসবিদ ইওয়ান ক্যামেরনের মতে, রানি ভিক্টোরিয়া ও লেখক ওয়াল্টার স্কটের প্রভাবেই “বালমোরালাইজেশন” বা স্কটল্যান্ডের রোমান্টিকীকরণ শুরু হয়।
রাজপরিবারের এই কেয়ার্নগুলো এখনো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। বালমোরাল কাসলের আশপাশের এলাকা হেঁটে ঘুরে দেখতে গেলে পুরনো পাথরের স্তম্ভগুলোর মধ্যে দিয়ে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে এক শতাব্দী আগের ভালোবাসা, শোক আর রাজকীয় আবেগ।
মুমু ২