
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত। নতুন করে স্বাধীন হয়েছে এদেশ। আর এই জাগরণের আগুনে প্রথম যে প্রদীপটি জ্বলে উঠেছিলো, তিনি হলেন—শহীদ আবু সাঈদ।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র, ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের রংপুর অঞ্চলের সমন্বয়ক।
১৫ জুলাই, ফেসবুকে রাজশাহীর শহীদ ড. শামসুজ্জোহার উদাহরণ টেনে তিনি লিখেছিলেন,
“স্যার! (মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা), এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিলো সবাই তো মরে গিয়েছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।
আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেচেঁ আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাচুঁন। নায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাড়াঁন। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেচেঁ থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।”
ঠিক পরদিন, ১৬ জুলাই—এই কথাগুলোকে বাস্তব করে, বুক চিতিয়ে পুলিশি গুলির সামনে দাঁড়িয়ে শহীদ হন তিনি। হাতে লাঠি, দু’হাত প্রসারিত, পেছনে সহযোদ্ধারা। তার বুক ঝাঁজরা করেও থামাতে পারেনি তার সাহসকে। তিনিই এই আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
জন্ম: ২০০১, পীরগঞ্জ, রংপুর
শিক্ষা: ট্যালেন্টপুল বৃত্তি, গোল্ডেন জিপিএ-৫, রংপুর কলেজ, পরে ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শহীদ আবু সাঈদ-এর শাহাদাত শুধু একজন ছাত্রের মৃত্যু নয়—এটি এক গণআন্দোলনের সূচনা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, ‘তার কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র ছিল না, অথচ গুলি করা হয়েছে। এ ধরণের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তার মৃত্যু শুধু প্রজন্ম নয়, গোটা জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল:
পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ করা হয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের নাম: ‘শহীদ আবু সাঈদ গেইট’ রাখা হয়েছে।
‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
কবিতা, ফন্ট, স্মরণসভা, লোগো—সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর আদর্শ। যিনি মরে গিয়েও অমর হয়ে থাকলেন।
আমাদের সাঈদ ভাই, বাংলার প্রতিটি তরুণের মুখে এখন একটাই নাম—শহীদ আবু সাঈদ।
এই শাহাদাত যেন বৃথা না যায়—এই দায় এখন আমাদের।
রাকিব