ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

হতে হবে মানবিক

জাসিন্তা আরেং

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

হতে হবে মানবিক

নির্জন বৃদ্ধাশ্রমের কক্ষে বসে থাকা কোনো প্রৌঢ়, কিংবা পরিবারের কোণে অবহেলিত দাদু-দাদিরা আমাদের সমাজের শ্রদ্ধাযোগ্য প্রবীণ। তাদের মাঝেই আমাদের সমাজের ইতিহাস, অভিজ্ঞতা ও অস্তিত্বের শেকড় প্রোথিত, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও ভালোবাসায় গড়ে উঠেছে এই আধুনিক সভ্যতা। একসময় তাদেরই অপার স্নেহ-মমতার ছায়ায় আমরা বেড়ে উঠেছি। আজ তাদেরই বিরাট একটা অংশ রয়েছেন একাকিত্ব ও অভাব-অনটন ও অবহেলার অন্ধকারে। এই অন্ধকারে প্রবীণদের ঠেলে দেয়ার দায় আমরা অস্বীকার করতে পারি না। যান্ত্রিক জীবনের ধাবমানতায় আমরা ভুলতে বসেছি যে, প্রবীণরাও ভালোবাসা, যত্ন ও মর্যাদার পূর্ণ দাবিদার। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই মানুষগুলো শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন পরিবারের অবহেলায়। সন্তানদের দূরত্ব, একাকিত্ব ও পরিবারের নিষ্ক্রিয়তা প্রবীণদের মানসিক সুস্থতার গতিকে মন্থর করছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পেনশনের অভাব বা সঞ্চয় শেষ হয়ে যাওয়া তাদের জীবনে এক অস্থিরতা এনে দেয়। এসব নিছক করুণ দৃশ্য নয়, বরং আমাদের মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক সচেতনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রবীণদের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত যত্নব্যবস্থা, যেখানে পুষ্টিকর খাদ্য, মানসিক প্রশান্তি, ও সক্রিয় সামাজিক জীবনের সুযোগ থাকবে। তাদের সঙ্গে অবসর সময় কাটানো, তাদের মতামতকে গুরুত্ব ও শ্রদ্ধা করা এবং তাদের পারিবারিক-সামাজিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে শুধু দায়িত্ববোধ নয়, মানবিকতারও প্রকাশ ঘটবে। ডিজিটাল যুগে প্রবীণদের জন্য অনলাইন চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা, ভিডিও কল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত থাকার সুযোগ তৈরি করতে পারলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে, যা প্রবীণদের সমাজের সব বয়সের মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত রাখবে ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও প্রবীণসেবার দায়িত্বে নিয়োজিত সংগঠন বা সংস্থার কাঁধে দায় চাপানোর প্রবণতা কমিয়ে প্রবীণদের সেবার্থে উদ্যোগী হতে হবে। মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপনে দায়িত্বশীল সরকারকেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শহর থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত প্রবীণদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও প্রবীণ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবায় নিয়োজিত হতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি একটি বিশেষ মানবিক আহ্বান। 
একটি উন্নত ও মানবিক সমাজ গঠনের জন্য প্রবীণদের মর্যাদা রক্ষা ও মানসম্মত জীবন নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। প্রবীণদের সঙ্গে এ প্রজন্মের মাঝে সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করাটা অতি আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, সময়ের পরিক্রমায় আমরাও এই প্রবীণদেরই অনুসরণ করছি। কাজেই আজ আমাদের সমাজ প্রবীণদের যা করব, আগামী প্রজন্মও আমাদের তাই উপহার দিবে। সুতরাং আসুন, প্রবীণদের মুখে যদি আজ হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি, ভবিষ্যতে তারই প্রতিফলন যেন আমাদের জীবনে ঘটবে। কারণ প্রবীণদের সেবাতেই নিহিত আছে প্রকৃত মানবতা।
ময়মনসিংহ থেকে

প্যানেল/মো.

×