ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বিটিআরসিতে দুর্যোগকালীন টেলিকম ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ১৬ জুলাই ২০২৫

বিটিআরসিতে দুর্যোগকালীন টেলিকম ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

বিপর্যয়ের সময় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সচল রাখতে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এ সভায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, মোবাইল অপারেটর ও টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সভায় দুর্যোগকালীন সময়ে টেলিযোগাযোগ খাতে বিদ্যমান সমস্যাবলি যেমন—বিদ্যুৎ বিভ্রাট, নেটওয়ার্ক ডাউন, ফাইবার অপটিক ও মাইক্রোওয়েভ লিংকের ক্ষতি, কল ড্রপ ও ডেটা সংযোগের বিঘ্নতা, টেকনিশিয়ানদের সীমিত গতিশীলতা এবং বিকল্প টেলিযোগাযোগ মাধ্যমের ঘাটতির মতো বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়।

বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ এসব চ্যালেঞ্জের চিত্র উপস্থাপন করেন। তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে বিদ্যমান কাঠামোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

মোবাইল অপারেটর ও ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এর প্রতিনিধিগণ বলেন, তারা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাসমূহের ওপর নির্ভরশীল। তাই দুর্যোগের আগেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমিয়ে আনার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান। একইসঙ্গে টেলিযোগাযোগকে ‘জরুরি সেবা’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দেন।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি দুর্যোগকালীন সময়ে ভিস্যাট ইকুইপমেন্ট সরবরাহের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় স্থায়ীভাবে সোলার, জেনারেটর ও ভিস্যাট স্থাপন করলে সংকটকালে টেলিযোগাযোগ সচল রাখা সম্ভব।

টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেন, টাওয়ার সাইটে জেনারেটর এবং কর্মীদের থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সংকটকালীন সময়ে সেবা ব্যাহত হয়। এজন্য বিটিআরসিকে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোকে রেড-ইয়েলো-গ্রিন জোনে ভাগ করে নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রতিনিধি বলেন, দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হয়, বিশেষত যেসব এলাকায় গাছপালা বিদ্যুৎ লাইনের আশেপাশে রয়েছে। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ সহনশীল বৈদ্যুতিক খুঁটি নির্মাণ ও ইনসুলেটর স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক জানান, বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশসমূহ পেলে তা আগামী পাঁচ বছর মেয়াদী জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইকবাল আহমেদ বলেন, “প্রতিটি অপারেটরের নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর সক্ষমতা ভিন্ন। তাই নিজ নিজ পর্যায়ে সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে হবে। দুর্যোগকালীন সমস্যা ক্যাটাগরিভিত্তিক চিহ্নিত করে ধাপে ধাপে সমাধান এবং তথ্য শেয়ারিং নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি ভবিষ্যতে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে একটি সমন্বিত, টেকসই নীতিমালা তৈরির প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন।

সভায় বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মাহমুদ হোসেনসহ কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি, সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, আবহাওয়া অধিদপ্তর, মোবাইল অপারেটর, টাওয়ার কোম্পানি, আইএসপি, এনটিটিএন, আইটিসি এবং অ্যামেচার রেডিও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

নোভা

×