
ছবি: সংগৃহীত
এক টুকরো পাথর—দেখতে একটু বড়, মানুষের হাতে ধরার মতোই। অথচ এর দাম শুনলে মনে হবে, এটি কোনো রাজা-বাদশার গুপ্তধন, সদবিসের কোনো বিখ্যাত নিলামে তোলা বিরল সম্পদ।
নাম এনডব এ-১৬৭৮৮, ওজন মাত্র ২৫ কেজি, কিন্তু দাম—৪০ লাখ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৪৮ কোটি টাকা!
প্রশ্ন উঠতে পারে, একটা পাথর নিয়ে এত মাতামাতির কারণ কী?
এই প্রশ্নের উত্তর জানলে বোঝা যাবে, এটি কেবল একটি পাথর নয়—এটি পৃথিবীর বুকে পাওয়া মঙ্গল গ্রহের সবচেয়ে বড় পাথরখণ্ড, একদম অন্য গ্রহের বার্তা যেন! সদবিসের বিখ্যাত নিউইয়র্ক নিলামে উঠেছিল এই মহাজাগতিক নিদর্শনটি। শুধু এই পাথরই নয়, সেই নিলামে ছিল আরও বিস্ময়কর সংগ্রহ—ছয় ফুট লম্বা সিরাটোসরাস ডাইনোসরের কঙ্কালও।
এই পাথরটি প্রথমে খুঁজে পেয়েছিলেন নাইজেরিয়ার সাহারা মরুভূমিতে এক উল্কাপিণ্ড সংগ্রাহক, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে। তখনো তিনি জানতেন না, তার হাতে ধরা পাথরটি কেবল একটি শিলা নয়—এটি পৃথিবী ও মঙ্গলের দূরত্ব খোঁজার এক মহাজাগতিক সূত্র।
মহাবিশ্ব পেরিয়ে আসা এক বিস্ময়
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে, এই পাথর আসলে এক উল্কাপিণ্ড, যা বিশাল এক গ্রহাণুর ধাক্কায় মঙ্গলের বুক থেকে ছিটকে বের হয়ে আসে। এরপর ১৪ কোটি মাইল পেরিয়ে, এসে পড়ে পৃথিবীর বুকে।
পাথরটির গায়ে লাল, বাদামি ও ধূসর রঙের ছোপছোপ মিশে আছে। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এর বিজ্ঞানসম্মত মূল্য আকাশ ছোঁয়া।
পৃথিবীতে মঙ্গল থেকে যত উপাদান পাওয়া গেছে, তার প্রায় ৭ শতাংশই আছে এই এক খণ্ড পাথরে। এমনকি, মঙ্গল গ্রহ থেকে পাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম পাথরখণ্ডের চেয়েও এটি প্রায় ৭০ শতাংশ বড়!
মাত্র ৪০০টি পাথর, তার মধ্যে সেরা
সদ্দিস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে পাওয়া ৭৭ হাজারেরও বেশি উল্কাপিণ্ডের মধ্যে মাত্র ৪০০টির উৎস নিশ্চিতভাবে মঙ্গল গ্রহ। তাদের মধ্যেই সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে দামী হলো এই এনডব এ-১৬৭৮৮।
পাথরটির একটি ছোট অংশ পাঠানো হয়েছিল বিশেষায়িত পরীক্ষাগারে, যেখানে নিশ্চিত হওয়া গেছে—এটা সত্যিই মঙ্গল গ্রহেরই একটি খণ্ড।
শেখ ফরিদ