ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড ফেরত পেতেই কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিসর্জন?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৬ জুলাই ২০২৫

৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড ফেরত পেতেই কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিসর্জন?

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে IHRA (International Holocaust Remembrance Alliance)-এর প্রস্তাবিত ইহুদিবিদ্বেষের সংজ্ঞা (definition of anti-Semitism) গ্রহণ করেছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, ইসরায়েল রাষ্ট্রের সমালোচনাকেও ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও একাধিক গবেষক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪৩৫০ কোটি টাকা) ফেডারেল অর্থ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে।

IHRA-র ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ইহুদিবিদ্বেষের প্রকাশ ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু বানানো’—যেটিকে তারা একটি ‘ইহুদি জাতিগত সত্তা’ হিসেবে দেখে। সংস্থাটি উদাহরণ হিসেবে বলছে, কেউ যদি বলে ‘ইসরায়েল একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ অথবা ‘ইসরায়েলের জন্য বিশেষ নৈতিক মানদণ্ড প্রয়োগ করা উচিত, যা অন্য কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য নয়’—তবে সেটিও ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই সংজ্ঞাটি অত্যন্ত সমস্যাজনক, কারণ এটি ইসরায়েলবিরোধী ন্যায্য সমালোচনাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ করে দেয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ১০০টিরও বেশি সিভিল সোসাইটি সংগঠন জাতিসংঘকে চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছিল, এই সংজ্ঞা যেন জাতিসংঘ গ্রহণ না করে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করে ছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বেতসেলেম, গিশাসহ একাধিক ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক সংগঠন। তারা যুক্তি দেয়, এই সংজ্ঞা অনুসারে এমনকি ইতিহাসভিত্তিক গবেষণা—যেমন, “ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বহু ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল” অথবা, “ইসরায়েলকে একটি বহুজাতিক, নাগরিক-ভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের প্রস্তাব”—তাও ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

এছাড়াও, সংজ্ঞার “double standards” উদাহরণটির অপব্যবহার করে যেকোনো ইসরায়েল সমালোচককে দমন করা সহজ হয়ে ওঠে—যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে।

এমনকি এই সংজ্ঞার মূল রচয়িতা কেনেথ স্টার্ন নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ডানপন্থী ইহুদি সংগঠনগুলো এই সংজ্ঞা "অস্ত্র" হিসেবে ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং সমালোচকদের মুখ বন্ধ করছে।

এই পরিস্থিতিতে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে। শিক্ষাবিদরা প্রশ্ন তুলছেন—একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিপরীতে এমন বিতর্কিত সংজ্ঞা গ্রহণ করতে পারে?

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×