ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

নতুন পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিতে চায় ট্রাম্প! কিন্তু খরচ দিচ্ছে কে?

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৮, ১৬ জুলাই ২০২৫

নতুন পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিতে চায় ট্রাম্প! কিন্তু খরচ দিচ্ছে কে?

ছবি:সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশেষে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার একটি পছন্দনীয় উপায় খুঁজে পেয়েছেন—ইউরোপীয় মিত্রদের পুরনো অস্ত্র দান করাতে রাজি করানো, আর আমেরিকা সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে নতুন অস্ত্র বিক্রি করে।

এই পরিকল্পনা ইউক্রেন ও তার মিত্রদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আশার বার্তা হলেও, এর বাস্তবায়ন এখনও বহু প্রশ্নের মুখোমুখি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—কারা তাদের মূল্যবান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম, ইউক্রেনকে দেবে এবং কবে?

ট্রাম্প বললেন, "আমরা শ্রেষ্ঠ অস্ত্র বানাবো, আর সেগুলো যাবে নেটোতে।"
তিনি আরও জানান, কয়েকটি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম “দুই-এক দিনের মধ্যে” ইউক্রেনে পৌঁছাতে পারে। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের শহরগুলোকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, পুরোনো সংশয়
এই পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও নেটো মহাসচিব মার্ক রুটের সাম্প্রতিক আলোচনার মাধ্যমে। যদিও ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা একে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন, বিশ্লেষকরা বলছেন এটি এখনও একটি কাঠামো মাত্র—বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

একজন ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন, "এই ধরনের পরিকল্পনায় সবসময়ই আসল চ্যালেঞ্জ থাকে বিস্তারিত বাস্তবায়নে।"

কারা দেবে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম?
ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে রুটে ছয়টি নেটো দেশের নাম উল্লেখ করেন—ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও কানাডা, যারা এই পরিকল্পনায় অংশ নিতে আগ্রহী।

কিন্তু এই দেশগুলোর কূটনীতিকরা রয়টার্সকে জানান, তারা এই পরিকল্পনার বিষয়ে জানেননি ট্রাম্প ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত। ফলে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছেন।

পেছনের রাজনীতি ও বাস্তবতা
কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় থাকবে, বিশেষ করে গ্রীস ও স্পেনের মতো দেশগুলো, যাদের নিজস্ব নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

একজন ইউএস কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন নেটোর অস্ত্রের মজুত খতিয়ে দেখছে এবং ইউক্রেনে কী পাঠানো সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা করছে। এমনও হতে পারে, মিত্র দেশগুলোর কিছু সামরিক সরঞ্জামের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত পুনঃসরবরাহ বা প্রযুক্তিগত সহায়তা পাবে তারা।

ইউক্রেনের আশাবাদ এবং ইউরোপের সাড়া
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমরা প্রস্তুত অংশ নিতে।" জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রীও প্যাট্রিয়ট পাঠানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে বাস্তবায়নে কয়েক মাস লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস বলেন, "যদি আমরা দেই এবং আমাদের টাকায় দেই, তবে এটি ইউরোপের সহায়তা। শুধু কথা বললেই সহায়তা হয় না।"

ট্রাম্পের ভূমিকা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
ট্রাম্পের রাশিয়াবিষয়ক মনোভাবেও সাম্প্রতিক সময়ে বদল এসেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি এখন বুঝতে পারছেন পুতিনের লক্ষ্য কেবল ক্রিমিয়া বা পূর্ব ইউক্রেন নয়—তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও বিস্তৃত।

যদিও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমা চাপের মুখেও পুতিন যুদ্ধ থামাবেন না। নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ট্রাম্প ঘোষিত রাশিয়ান তেল ক্রেতাদের ওপর সম্ভাব্য শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও, রাশিয়া এখনও নিজেদের অবস্থানে অনড়।


ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন কৌশল ইউক্রেনের জন্য এক ধরনের আশার আলো জ্বালালেও, কী পরিমাণ সহায়তা তারা পাবে এবং কবে পাবে—তা এখনও অনিশ্চিত। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, "অনেকেই বলছে ‘আমরা সাহায্য করব’, কিন্তু সেই কথার অর্থ কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়।"


ট্রাম্প ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে উৎসাহিত করছেন তাদের অস্ত্র সরবরাহ করতে, আর আমেরিকা সেই ঘাটতি পূরণ করবে। পরিকল্পনাটি আশাপ্রদ হলেও বাস্তবায়নে জটিলতা ও দেরি রয়েছে। ইউক্রেনের জন্য চ্যালেঞ্জের সময়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হতে পারে—তবে কতটা হবে, সেটা নির্ভর করবে আসন্ন আলোচনার ফলাফলের ওপর।

 
 
 

মারিয়া

×