ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

যথাযোগ্য মর্যাদায় "জুলাই শহিদ দিবস" ও শহিদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকী পালিত

শাকিল আহমেদ, রংপুর

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৫৬, ১৬ জুলাই ২০২৫

যথাযোগ্য মর্যাদায়

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সৈনিক শহিদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জুলাই শহিদ দিবস পালিত।

 বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়ার বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ শওকাত আলী। এ সময় শহিদ আবু সাঈদের বাবা, ভাই, জুলাই বিপ্লবের সহযোদ্ধা ও আহত শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে ক্যাম্পাসে শোক র‌্যালির আয়োজন করা হয়। শহিদ আবু সাঈদের পরিবারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল, দপ্তর থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অংশগ্রহণে শোক র‌্যালিটি পার্কের মোড় শহিদ আবু সাঈদ চত্বর হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।শহিদ আবু সাঈদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেটে শহিদ আবু সাঈদ তোরণ, জাদুঘর ও স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প এবং পার্কের মোড়ে শহিদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শহিদ আবু সাঈদের বাবা মোঃ মকবুল হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়  এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ অতিথিরা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব সিদ্দিক জোবায়ের এবং ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানসহ শহিদ পরিবারের সদস্যরা।

এরপর জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা স্মারক মাঠে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শহিদ আবু সাঈদের বাবা মোঃ মকবুল হোসেন। এ সময় তিনি আবু সাঈদের হত্যাকান্ডের জন্য দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি প্রদানের দাবি জানান। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে জুলাই আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্যরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল তাঁর বক্তব্যে বলেন, শহিদ আবু সাঈদ জুলাই আন্দোলনের বীর শ্রেষ্ঠ। তিনি বলেন, আবু সাঈদের আদর্শ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ছিল। আবু সাঈদের অমর আত্মত্যাগ নিরীহ মানুষদের প্রতিবাদী হবার শিক্ষা দেয়। ড. আসিফ নজরুল জানান, শহিদ আবু সাঈদের বিচার কাজ পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে এবং বর্তমান সরকারের আমলে বিচারকাজ শেষ হবে।সম্মানিত অতিথি হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়  এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আবু সাঈদের আত্ম নিবেদনের রক্তিম রেখা আমাদের জাতীয় স্মৃতিতে আজও অম্লান। তাঁর আত্মত্যাগ ছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামোয় বিরাজমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ। এ সময় তিনি আরও বলেন, রংপুর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আগামী বছর থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।আলোচনা সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, শহীদ আবু সাঈদের আত্মদানের ঘটনা আজ পরিণত হয়েছে আমাদের জাতির আত্মজাগরণের প্রতীকী উৎসে। তাঁর হৃদয়ের সাহস, চিন্তার প্রখরতা ও নেতৃত্বের দীপ্তি ছিল দেশের ছাত্র সমাজের জন্য এক নবজাগরণের ঘন্টাধ্বনি। ইতিহাস তাঁকে স্মরণ রাখবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব সিদ্দিক জোবায়ের ও ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। শহিদ আবু সাঈদ দিবস পালন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোঃ তাজুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ড. মোঃ হারুন-অর রশিদ, শহিদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা বেরোবির শিক্ষার্থী ও শহিদ পরিবারের সদস্য প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় জুলাই বিপ্লবে শহিদদের পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এ সময় শহিদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত জুলাই স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদের অবদানের উপর দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচি, চিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, জুলাই শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
 

রাজু

×