ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

নতুন রাজা নতুন রানী

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২১, ১৬ জুলাই ২০২৫

নতুন রাজা নতুন রানী

উইম্বলডনের পুরুষ ও নারী এককের চ্যাম্পিয়ন ইতালির ইয়ানিক সিনার ও পোল্যান্ডের ইগা সুইয়াটেক (ডানে)

নতুন রাজা ও নতুন রানী পেল উইম্বলডন। লন্ডনে ঘাসের কোর্টে পুরুষ এককের ফাইনালে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে পাঁচ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক স্প্যানিশ তারকা কার্লোস আলকারাজকে ৪-৬, ৬-৪, ৬-৪ ও ৬-৪ গেমে হারিয়ে প্রথম কোনো ইতালিয়ান হিসেবে উইম্বলডনের শিরোপার জিতলেন নাম্বার ওয়ান ইয়ানিক সিনার। আর নারী এককে শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে একতরফা জয়ের পথে আমেরিকার আমান্ডা আনিসিমোভাকে স্ট্রেট ৬-০, ৬-০ গেমে উড়িয়ে দিয়েছেন পোল্যান্ডের ইগা সুইয়াটেক।

গত ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালেও লড়েছিলেন কার্লোস আলকারাজ ও সিনার। সেই টুর্নামেন্টের রেকর্ড ৫ ঘণ্টা ২৯ মিনিট লম্বা লড়াইয়ে শেষ কাব্যিক সেই ফাইনালে জিতেছিলেন আলকারাজই। কিন্তু লন্ডনের সেন্টার কোর্টে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারলেন না স্প্যানিশ তারকা। এদিন অবশ্য এই প্রজন্মের সেরা দুই তারকার লড়াইটি স্থায়ী হয়েছিল ৩ ঘণ্টা ৪মিনিট। প্রথম সেটে পিছিয়ে পড়া সিনার পরের দুটি সেট জেতেন ৬-৪, ৬-৪ গেমে। সিনারের প্রবল প্রতিরোধের মুখে কিছু অপ্রস্তুতও হয়ে পড়েন আলকালাজ। শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান। এই হারে উইম্বলডনে টানা তিনটি শিরোপা জেতা হলো না আলকারাজের। 
তবে তাঁর বয়স মাত্র ২২ বছর। কে জানে একদিন হয়তো হতেও পারে। প্রথম ইতালিয়ান হিসেবে ইতিহাস গড়া সিনারের বক্তব্যেই তো সেটি ফুটে উঠছে, ‘চমৎকার একটি টুর্নামেন্ট, তুমি যে মানের খেলোয়াড়... তোমার বিপক্ষে খেলা খুব কঠিন। এগিয়ে যাও, লড়াই জারি রাখো, এই ট্রফি তুমি অনেকবার জিততে পারবে, ইতোমধ্যে তুমি দুটি জিতেছো।’ আলকারাজের এই হার কিংবা সিনারের এই জয় ছাপিয়ে সামনে এসেছে দুজনের ব্যক্তি দ্বৈরথ। ব্যক্তি দ্বৈরথ সব সময়ই সব খেলারই প্রাণ।

ফুটবলে লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানোর দ্বৈরথ এক সময় ছিল ফুটবলের বড় আকর্ষণ। অ্যাথলেটিকসে এক সময় ছিল কার্ল লুইস-বেন জনসন, কিংবা উসাইন বোল্ট-জাস্টিন গ্যাটলিন দ্বৈরথ। টেনিসেও ফেদেরার-নাদাল, নাদাল-জোকোভিচ মাতিয়ে রাখত টেনিসকে। বিশ্ব টেনিসে এখন এসে গেছে সিনার-আলকারাজ দ্বৈরথ। সর্বশেষ পাঁচবারের মুখোমুখি লড়াইয়ের প্রতিটিতেই পরাজয়। এখানেও শুরুটা ভালো ছিল না সিনারের। প্রথম সেট জিতে দুর্দান্ত সূচনা করেছিলেন ২২ বছর বয়সী আলকারাজ।

এরপর প্রত্যাবর্তনের অসাধারণ এক গল্প লিখে পরের তিন সেট জিতে উইম্বলডনে প্রথম শিরোপার স্বাদ পেলেন ২৩ বছর বয়সী সিনার। এটিপি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা দুই খেলোয়াড়ের লড়াই শুরুর আগে যতটা রোমাঞ্চের সম্ভাবনা ছিল, বাস্তবে ততটা হলো না।  এখানে হ্যাটট্রিক শিরোপার হাতছানিতে দারুণ শুরুর পরও পারলেন না স্প্যানিশ সেনসেশন আলকারাজ। তিন ঘণ্টার একটু বেশি সময়ের লড়াইয়ে জিতে ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর তারকা সিনার। 
ম্যাচের দশম গেমে প্রতিপক্ষের সার্ভিসে পয়েন্ট নিয়ে প্রথম সেট নিজের করে নেন ২০২৩ ও ২০২৪ আসরের চ্যাম্পিয়ন আলকালাস। দ্বিতীয় সেটের প্রথম গেমেই তার সার্ভিসে পয়েন্ট নিয়ে পাল্টা জবাব দেন সিনার। থেকেই লাগাম মুঠোয় নেন সিনার, যা আর হাতছাড়া করেননি ইতালিয়ান এ তারকা। আগের ১২ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে সবশেষ পাঁচটিসহ মোট আটবার জিতেছিলেন আলকারাজ, কিন্তু এখানে তিনি তেমন লড়াই জমাতেই পারলেন না।

এ নিয়ে টানা চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যামের ফাইনালে উঠে তিনটিতেই চ্যাম্পিয়ন হলেন সিনার। এর মধ্যে তার একমাত্র পরাজয়টি আলকারাজের বিপক্ষেই; ফরাসি ওপেনে গত আসরের ফাইনালে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময়ের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে জিতেছিলেন পাঁচটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ী স্প্যানিশ তারকা। ২০২৪ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রথম গ্র্যান্ডস্ল্যামের স্বাদ পেয়েছিলেন সিনার। পরের বছর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সংখ্যাটা হয়ে গেল চার, এর তিনটিই আবার সবশেষ চার গ্র্যান্ডস্লামে।

অন্যদিকে গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনাল হারের নজির নেই ইগা সুইয়াটেকের। আগের পাঁচবারের পাঁচটিতেই পেয়েছেন শিরোপার দেখা। ষষ্ঠবারে এসেও রেকর্ড অক্ষুণœ রাখলেন পোলিশ তারকা। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামান্ডা অ্যানিসিমোভাকে ৬-০, ৬-০ গেমে হারিয়ে পেলেন উইম্বলডনের নতুন রানির মুকুট। 
মাত্র ৫৭ মিনিটে সুইয়াটেক দেখান একচ্ছত্র আধিপত্য। উন্মুক্ত যুগে গ্র্যান্ডস্লাম ইতিহাসে নারী এককে ডাবল ব্যাগেল নিয়ে শিরোপা জয়ের রেকর্ড ছিল স্টেফি গ্রাফের। ১৯৮৮ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে নাতাশা জভেরভাকে ৬-০, ৬-০ গেমে হারিয়েছিলেন। ৩৭ বছর পর উইম্বলডনে এসে সেই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন সুইয়াটেক। গত কয়েক বছরে মহিলাদের গ্র্যান্ডস্লামের বেশির ভাগ ট্রফিই তিন তারকার মধ্যে ভাগ হয়েছে। শিয়নটেক ছাড়া তালিকায় রয়েছেন কোকো গফ ও এরিনা সাবালেঙ্কা। গফ এ বার প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছেন।

বাকি ছিলেন সাবালেঙ্কা। তাঁকেও সেমিফাইনালে হারিয়ে চমক দিয়েছিলেন আনিসিমোভা। ফলে শিয়নটেকের সামনে লড়াই সহজ ছিল। ঠান্ডা মাথায় তা জিতে নিলেন তিনি। ২০২৪ সালে ফরাসি ওপেন জেতার পর চারটে গ্র্যান্ডস্লামে নেমে জিততে পারেননি তিনি। পছন্দের ফরাসি ওপেনও (ছয়টি গ্র্যান্ডস্লামের মধ্যে তাঁর চারটেই লাল সুরকির কোর্টে) এ বার হতাশ করেছে। অবশেষে ঘাসের কোর্টে হাসি ফিরল তাঁর মুখে। র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৩ নম্বর আনিসিমোভার এটি ছিল প্রথম কোন গ্র্যান্ডস্ল্যামের ফাইনাল। সেমিফাইনালে যে ভাবে তিনি অ্যারিনা সাবালেঙ্কার পাওয়ার টেনিস সামলে জিতেছিলেন, তা নজর কেড়েছিল। 
ফাইনালেও তিনি অঘটন ঘটাতে পারেন কি না, সে দিকে নজর ছিল টেনিসপ্রেমীদের। হয়তো প্রথম বার ফাইনালের চাপ সামলাতে পারলেন না তিনি। নইলে সেমিফাইনালে যে খেলাটা খেলেছিলেন, তার ১০ শতাংশও এ দিন খেলতে পারেননি তিনি। তার খেসারত দিতে হলো। সুইয়াটেক  দেখেছিলেন, কীভাবে সাবালেঙ্কার পাওয়ার টেনিস সামলেছেন আনিসিমোভা। তাই ফাইনালে তিনি পাওয়ার টেনিস খেলেননি। উল্টো শটে বৈচিত্র্য এনেছেন। আনিসিমোভাকে বুঝতে দেননি, কী শট খেলবেন, দৌড়ের ওপর রেখেছেন!

×