
সাফ ফুটবলে হ্যাটট্রিক করার পর দুই সতীর্থের সঙ্গে বাংলাদেশের শান্তি মার্দির (মাঝে) উদ্যাপন, মঙ্গলবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়
মৌসুমি বৃষ্টিতে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার মাঠের যা অবস্থাÑ টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই অসন্তোষ ছিল খোদ বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারেরও। মঙ্গলবার সেটি যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেল। হাফ টাইমের পর মুল মাঠ থেকে খেলা সরে গেল অনুশীলন মাঠে; আন্তর্জাতিক ফুটবলে এমন ঘটনা সত্যি বিরল! শান্তি মার্দির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে যেখানে শেষ পর্যন্ত ভুটানের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করল আফঈদা খন্দকারের দল।
বিকেল তিনটায় খেলা শুরুর ৭ মিনিটেই শান্তির গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ওই অবস্থায় প্রধমার্ধ শেষে বৃষ্টি ও ভেজা মাঠে প্রায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে খেলা। উপায়ন্তর না দেখে এরপর পাশেই কিংস অ্যারেনার অনুশীলন গ্রাউন্ডে সরিয়ে নেওয়া হয় ম্যাচের বাকি অংশ। পৌনে সাতটায় খেলা শুরু হলে ৫৩ মিনিটে ওয়াংমোর গোলে সমতা ফিরিয়ে চমকে দেয় ভুটান। ৫৭ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে দলকে এগিয়ে নেন শান্তি। ৭৬ মিনিটে মনুকি আক্তার ব্যবধান ৩-১ করেন।
এরপর ৮০ মিনিটে হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশকে ৪-১ ব্যবধানের জয় উপহার দিয়ে ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন শান্তি। দারুণ এ জয়ে বয়সভিত্তিক সাফে শিরোপা ধরে রাখার পথে অবস্থান আরও শক্ত করল বাঘিনীরা। চার দলের আসরে তিন ম্যাচে টানা তিন জয়ে টেবিলের শীর্ষে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৯। যেখানে প্রতিপক্ষের জালে ১৬ গোল দিয়ে মাত্র ৩ গোল হজম করেছে মেয়েরা। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এবার কোনো ফাইনাল নেই। প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে দুইবার করে মুখোমুখি হবে।
পয়েন্ট টেবিলের সেরা দল হবে চ্যাম্পিয়ন। শ্রীলঙ্কা-নেপাল ম্যাচের আগে এ রিপোর্ট লেখার সময় ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে নেপাল। কোচ বাটলার এদিন বেঞ্চের ফুটবলারদের পরখ করেছেন। নেপালের বিপক্ষে ম্যাচের ফুটবলারদের মধ্যে একাদশে আছেন মাত্র দুজনÑ বন্যা খাতুন ও শান্তি মার্দি। গোলরক্ষক পজিশনে স্বর্ণা রানী মন্ডলের পরিবর্তে প্রথমবার দেখা মিলল মিলি আক্তারের। অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের বদলে সুরমা জান্নাতের হাতে ছিল আর্ম ব্যান্ড।
লাল কার্ডের কারণে এমনিতেই দলে ছিলেন না মোসাম্মৎ সাগরিকা। বেঞ্চে বসে খেলা দেখেছেন মুনকি আক্তার, পূজা দাস ও সিনহা জাহান শিখা। ম্যাচের ২ মিনিটে তৃষ্ণা রানীর শট আটকে যায় কাদায়। এরপর ৭ মিনিটে শান্তি মার্দি তিন বারের চেষ্টায় গোল দিয়েছেন।
ভেজা মাঠে বল আটকে যাচ্ছিল বক্সের মধ্যে। প্রথমবার ভুটানের গোলরক্ষক পেমা ইয়াংজম শান্তির শট আটকে দেয়। পরের দুবার চেষ্টা করে অবশেষে গোল পান শান্তি। ম্যাচের বাকি সময়ে আসলে কাদাময় মাঠে দুই দলের ফুটবলাররা শুধু বলের পেছনে দৌড়েছেন। কখনো বল রিসিভ করতে গিয়ে আছাড় খেয়েছেন গোলরক্ষক। কখনো ফুটবলাররা বল পাস দিয়েছেন সতীর্থকে।
কিন্তু সেই বল ধরতে গিয়ে কাদামাটিতে গড়াগড়ি করেছেন। এমন মাঠে চোটে পড়লে দিন শেষে দায় নেবে কে? সেই কারণেই কি না শেষ পর্যন্ত সাফের বোধোদয় হয় এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ভেন্যু বদল করে আয়োজকরা। দ্বিতীয়ার্ধে ট্রেনিং গ্রাউন্ডে দুই দলই আক্রমণের পসরা সাজায়। আর সেই আক্রমণের ফলে ভুটান গোল শোধ করে। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে ভুটানের সানগাই ওয়াংমো সমতা ফেরান (১-১)। তবে গোল খেয়ে আরও উজ্জীবিত দেখা যায় বাংলাদেশের মেয়েদের। এরপর ৬০ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় বাংলাদেশ শান্তি মার্দির গোলে (২-১)।