
রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী জীবনযুদ্ধে এক অদম্য তরুণের নাম। প্রায় সাত বছর আগে হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য প্রিয় বাবাকে। তবুও দমেননি বরং দুঃখকে শক্তিতে রূপান্তর করে আজ তিনি হয়ে উঠেছেন পরিবারের একমাত্র ভরসাস্থল।
মোহাম্মদ আলীর বাসা দিনাজপুর জেলায় হলেও পড়াশোনার সুবাদে বর্তমানে তিনি রাজশাহী শহরের বাটার মোড় এলাকায় একটি মেসে থাকেন। বাবার মৃত্যুর এক বছর পর, তার পরিবারে নেমে আসে নানা প্রতিকূলতা। সেই প্রতিকূলতায় আলী ভেঙে পড়েননি, বরং খুঁজেছেন টিকে থাকার নতুন পথ। সংসারের দায়িত্বের পাশাপাশি নিজের পড়াশোনার খরচ কাঁধে তুলে নিয়ে শুরু করেন পার্ট-টাইম হিসেবে ছোট ব্যবসা চটপটি, ফুসকা ও হালিম বিক্রি।
ব্যবসার শুরুতে নানা বাঁধা ও আর্থিক টানাপোড়েন থাকলেও বর্তমানে সেই বাঁধা অতিক্রম করে তাঁর খাবারের স্বাদ কাস্টমারের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের সামনে তিনি দোকান চালু করেন। দোকান শেষে মেসে ফিরে প্রতিদিন নির্ধারিত দুই ঘন্টা একাডেমিক বিষয়ে লেখাপড়া করেন। শুধু তাই নয়, সকালে কলেজের ক্লাস শেষে সময় বের করে একটি টিউশনিও করান। তার উপার্জিত অর্থে নিজের খরচ মেটানোর পাশাপাশি পরিবারের কাছেও নিয়মিত টাকা পাঠান আর সেই টাকায় তার পরিবার চলে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, “বর্তমান সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। তিনি চান, পড়াশোনা শেষ করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অবদান রাখতে। এছাড়াও ভবিষ্যতে নিজের নামে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করার স্বপ্নও তার আছে।”
তাঁর এই সংগ্রামী জীবনের গল্প সহপাঠীদের মাঝেও অনুপ্রেরণা ছড়িয়েছে। সহপাঠীরা মনে করেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বাবাকে হারিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মোহাম্মদ আলী যেভাবে এগিয়ে চলেছেন, তা তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণার অংশ।
Jahan