ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

কিডনির শত্রু আপনার প্লেটে: চিপস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার!

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

কিডনির শত্রু আপনার প্লেটে: চিপস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার!

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় চিপস, ফাস্ট ফুড এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপস্থিতি আমাদের জীবনকে সহজ করলেও, নীরবে তা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিডনি, যা শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থFiltering-এর কাজটি করে, এই ধরনের খাবারের কারণে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, অজান্তেই আমরা আমাদের কিডনির বড় ধরনের ক্ষতি করছি।

কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে, অতিরিক্ত লবণ এবং খনিজ পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। এছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতেও সাহায্য করে। কিন্তু যখন প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে থাকে, তখন কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

কেন প্রক্রিয়াজাত খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
১. উচ্চ সোডিয়াম: চিপস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, নুডুলস এবং অন্যান্য ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা কিডনির রক্তনালীগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিডনির সোডিয়াম ফিল্টার করার ক্ষমতাও একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই কাজ করে।

২. ফসফরাস অ্যাডভেডেন্টস: প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রায়শই ফসফরাস অ্যাডভেডেন্টস ব্যবহার করা হয়, যা খাবারের স্বাদ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু এই কৃত্রিম ফসফরাস কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্বাভাবিক খাবারে থাকা ফসফরাসের চেয়ে এই ধরনের ফসফরাস শরীর দ্রুত শোষণ করে নেয়। ফলে রক্তে ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং কিডনির দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. উচ্চ মাত্রার চিনি: প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চ পরিমাণে চিনি থাকে, যা শুধু স্থুলতা বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই বাড়ায় না, কিডনিকেও সরাসরি প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত চিনি কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত কিডনি ফেইলিওরের কারণ হতে পারে।

৪. স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট: চিপস এবং ফাস্ট ফুডে থাকা স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যেহেতু কিডনির স্বাস্থ্য সরাসরি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত, তাই এই ফ্যাটগুলো কিডনির কার্যকারিতাকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

৫. কৃত্রিম উপাদান ও প্রিজারভেটিভ: প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৃত্রিম রং, ফ্লেভার এবং প্রিজারভেটিভ কিডনির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কিডনিকে এই অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থগুলো শরীর থেকে বের করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, যা ধীরে ধীরে কিডনির ক্ষমতা হ্রাস করে।

আপনার কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয়:
প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: চিপস, ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসের ব্যবহার কমিয়ে দিন।

তাজা খাবার বেছে নিন: তাজা ফল, শাক-সবজি, গোটা শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: কিডনি সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।

লবণ ও চিনির পরিমাণ কমান: খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও চিনি যোগ করা থেকে বিরত থাকুন।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বিশেষ করে যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে নিয়মিত কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করান।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই কিডনিকে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। সচেতনতা এবং সঠিক পুষ্টি কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং একটি দীর্ঘ, স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করতে সহায়ক।

ফারুক

×