ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

শাহরুখ খানের ১১ কোটি টাকার ‘ধ্বংস’: ‘ত্রিমূর্তি’ ফ্লপ, একজন অভিনেতা জেলে, আরেকজনকে দেওয়া হয়েছিল হুমকি

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৮, ১৬ জুলাই ২০২৫

শাহরুখ খানের ১১ কোটি টাকার ‘ধ্বংস’: ‘ত্রিমূর্তি’ ফ্লপ, একজন অভিনেতা জেলে, আরেকজনকে দেওয়া হয়েছিল হুমকি

ছবিঃ সংগৃহীত

১৯৯৫ সালে শাহরুখ খান, জ্যাকি শ্রফ ও অনিল কাপুর অভিনীত বহুল প্রতীক্ষিত অ্যাকশন সিনেমা ‘ত্রিমূর্তি’ মুক্তি পায়। মুক্তির প্রথম দিনেই রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার পরেও সিনেমাটি সমালোচকদের নেতিবাচক মন্তব্য আর দর্শক প্রতিক্রিয়ার কারণে বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। বিশাল বাজেটের এই ছবি শেষ পর্যন্ত বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল ফ্লপ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

শীর্ষে থাকা শাহরুখের ‘ত্রিমূর্তি’ স্বপ্নের প্রকল্প

১৯৯৫ সালে শাহরুখ খান ছিলেন বক্স অফিসের রাজা। সেই বছর ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘করন অর্জুন’, এবং ‘রাম জানে’ সিনেমাগুলো সুপারহিট হয়। একই বছর ‘গুড্ডু’-ও আংশিক সফলতা পায়। এমন সময়ে পরিচালক মুকুল আনন্দের ‘ত্রিমূর্তি’তে শাহরুখের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন জ্যাকি শ্রফ ও অনিল কাপুর।

রেকর্ড বাজেট, বিশাল প্রত্যাশা

সুবাস ঘাইয়ের প্রযোজনা সংস্থা মুক্তা আর্টস যখন এই ছবির পেছনে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করেন, তখন এটি ছিল বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি। এর আগে এত ব্যয়বহুল ছিল না ‘শান্তি ক্রান্তি’ বা ‘আজুবা’র মতো সিনেমাগুলিও। সব দিক থেকে এটি ছিল এক ‘ব্লকবাস্টার’-এর স্বপ্নযাত্রা।

ইতিহাস গড়া মুক্তি, দ্রুত পতন

২২ ডিসেম্বর, ১৯৯৫-এ মুক্তির দিনেই ‘ত্রিমূর্তি’ ১ কোটি টাকার রেকর্ড আয় করে, যা তখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় ছবির সবচেয়ে বড় ওপেনিং ছিল। মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তেই বিশ্বজুড়ে আয় দাঁড়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকায়।

কিন্তু উড়ন্ত সূচনা সত্ত্বেও সিনেমাটি দ্রুতই মুখ থুবড়ে পড়ে। সমালোচকদের নেতিবাচক মন্তব্য আর দর্শকদের হতাশা সিনেমাটির আয়কে তলানিতে নামিয়ে আনে। ভারতের বাজারে ছবিটির মোট আয় ছিল মাত্র ৯ কোটি টাকা—১১ কোটি বাজেটের তুলনায় যা ছিল বড় এক ধাক্কা।

নেপথ্যে কাস্টিং কেলেঙ্কারি

প্রথমে এই ছবিতে শাহরুখ খান, জ্যাকি শ্রফ ও সঞ্জয় দত্তকেই নেওয়ার কথা ছিল। সঞ্জয় কিছু দৃশ্যের শুটিংও শেষ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণ মামলায় জেলে যাওয়ার পর তার জায়গায় নেওয়া হয় আদিত্য পাঞ্চোলিকে। পরে প্রযোজক সুবাস ঘাই চেয়েছিলেন অনিল কাপুরকে, এবং শেষ পর্যন্ত তিনিই জায়গা পান।

এই কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আদিত্য পাঞ্চোলি অনিল কাপুরকে হুমকি ফোন দিতে শুরু করেন, এমনকি ঘটনাটি এতটাই গুরুতর হয় যে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। পরে পাঞ্চোলি ক্ষমা চান এবং বিষয়টি মীমাংসিত হয়।

মুকুল আনন্দের শেষ চলচ্চিত্র

‘ত্রিমূর্তি’ কিংবদন্তি পরিচালক মুকুল আনন্দের শেষ পূর্ণাঙ্গ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। ১৯৯৭ সালে তিনি ‘দুস’ ছবির শুটিং চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে ‘ত্রিমূর্তি’-ই থেকে যায় তার শেষ স্মারক।

সিনেমাটিতে প্রিয়া তেন্ডুলকর, মোহন আগাশে ও অঞ্জলি জাতর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। যদিও ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়, তবে এর গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়। লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল জুটির সুরে “ভেরি গুড ভেরি ব্যাড” ও “বোল বোল বোল” গান দুটি চার্টবাস্টার হয়ে ওঠে, এবং আজও অনেকের প্রিয়।

ত্রিমূর্তি’ শেষ পর্যন্ত একটি ব্যর্থতার প্রতীক হলেও, এটি একটি যুগের তারকাখচিত সিনেমা হিসেবে বলিউড ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/entertainment/hindi/bollywood/news/this-film-was-shah-rukh-khans-rs-11-crore-disaster-film-bombed-one-co-star-went-to-jail-another-received-threats/articleshow/122574649.cms

ইমরান

×