
নারীদের জীবনের একটি স্বাভাবিক পর্যায় হলো মেনোপজ। এটি কোনো রোগ নয়, বরং প্রাকৃতিক হরমোনজনিত একটি পরিবর্তন। এই বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গাইনোকোলজিস্ট ডা. শাহনাজ চৌধুরী।
মেনোপজ কী?
ডা. শাহনাজ চৌধুরীর ভাষায়, “মেনোপজ হলো সেই সময়, যখন একজন নারীর মাসিক চক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এটি তখনই নির্ধারিত হয়, যখন টানা ১২ মাস ধরে কোনো রকম মাসিক না হয়।”
মেনোপজের ফলে ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতাই নারীদের দেহে নানা পরিবর্তনের সূচনা করে।
মেনোপজ কখন হয়?
মেনোপজ সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। তবে ডা. চৌধুরী জানান, “বাংলাদেশে নারীদের ক্ষেত্রে গড় মেনোপজ বয়স প্রায় ৪৮ বছর। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা আগেই হতে পারে, যাকে বলে ‘আর্লি মেনোপজ’। যদি ৪০ বছর বা তারও আগে মেনোপজ ঘটে, তখন সেটি ‘প্রিম্যাচিউর মেনোপজ’ হিসেবে ধরা হয়।”
মেনোপজের লক্ষণ
ডা. শাহনাজ চৌধুরী উল্লেখ করেন, মেনোপজ শুরু হওয়ার আগেই অনেক নারী 'পেরিমেনোপজ' পর্যায়ে পৌঁছান, যেখানে হরমোন ওঠানামা করে এবং মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
-
গরম অনুভব বা হট ফ্ল্যাশ
-
রাতের ঘাম
-
অনিদ্রা
-
মেজাজ পরিবর্তন বা ডিপ্রেশন
-
যৌন ইচ্ছায় হ্রাস
-
যোনিপথে শুষ্কতা
-
হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা
-
ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
চিকিৎসা ও করণীয়
“মেনোপজ চিকিৎসা নয়, কিন্তু এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা যায়,” বলেন ডা. চৌধুরী। কিছু ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) ব্যবহার করা হয়, তবে এটি সবার জন্য নয়। ঝুঁকি বিবেচনায় একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে লাইফস্টাইল পরিবর্তনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডা. চৌধুরীর পরামর্শ:
-
নিয়মিত ব্যায়াম
-
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
-
মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুম
মেনোপজ কোনো দুর্যোগ নয়, এটি জীবনের আরেকটি প্রাকৃতিক অধ্যায়। ডা. শাহনাজ চৌধুরী বলেন, “নারীদের উচিত নিজেদের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। মেনোপজের সময়ে নিজের যত্ন নেওয়াই ভবিষ্যৎ সুস্থতার চাবিকাঠি।”
Jahan