ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

প্রথমবারের মতো নিলামে ১৭১ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক, রেট কত ছিল?

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:৩০, ১৫ জুলাই ২০২৫

প্রথমবারের মতো নিলামে ১৭১ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক, রেট কত ছিল?

ছবি:সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে, যেখানে প্রতি ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১.৫০ টাকা। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন সময়ে যখন বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় রেট নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল।

কেন এই উচ্চ রেট?
ব্যাংকগুলো যেখানে ১২০ টাকার আশেপাশে ডলার বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছিল, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক এরচেয়ে বেশি দরে ডলার কিনে একটি শক্ত বার্তা দিলো—বাজারে ডলারের মূল্য এই রেটের নিচে নামবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা মূলত বাজারকে স্থিতিশীল রাখার কৌশল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমেদ বলেন, "আমরা এখনো ঠিক করিনি কত ডলার কিনব। বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী এ ধরনের নিলাম আরও হতে পারে।"

রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ওপর প্রভাব
একজন শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "ডলারের দাম যদি খুব কমে যায়, তাহলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়কারী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার অনেক রেমিট্যান্স হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পথে চলে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ সময়োচিত।"

আইএমএফ শর্ত এবং বাজারভিত্তিক রেট
এই নিলাম ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর শর্ত পূরণে এক ধাপ এগিয়েছে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট রেটে ডলার কিনতো বা বিক্রি করতো, কিন্তু এখন তারা বাজার-ভিত্তিক রেটে কেনাবেচা করছে।

একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, সোমবার সকালে নীতিমালা অনুমোদিত হওয়ার পর ৮-১০টি ব্যাংক এই নিলামে অংশ নেয়।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি
সম্প্রতি রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয়ে শক্তিশালী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আমদানি ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি বা কাঁচামাল আমদানি প্রায় বন্ধের মতো, যা বিনিয়োগ স্থবিরতার ইঙ্গিত দেয়।

একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপকের ভাষায়, "এখন বাজারে ডলারের জোগান বেশি, কিন্তু চাহিদা কম। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ডলার হাতে রাখতে চায় না কেউ। ফলে কিছু ব্যাংক ডলার বিক্রি করতেও পারছে না, যা রেট আরও নিচে নামানোর আশঙ্কা তৈরি করছিল।"

মারুফের দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলাদেশ এখনও মুদ্রা শক্তিশালী করার পর্যায়ে নয়
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, "ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিযোগী দেশগুলো নিয়মিত তাদের মুদ্রার মান কমায়। অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রার মান ধরে রেখেছিলাম। এখন কিছুটা ভারসাম্য ফিরছে।"

তিনি মনে করেন, সাময়িকভাবে ডলারের রেট কমলেও এটি দীর্ঘস্থায়ী নয়। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো মুদ্রা শক্তিশালী করার পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ শুধু ডলার রেট নিয়ন্ত্রণই নয়, বরং বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিতও দেয়। ভবিষ্যতে কীভাবে এই নীতিমালা কার্যকর হয় এবং বাজারে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

 
 

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×