ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের হাতে তিন বড় দুর্নীতি অভিযোগে সমন্বিত অভিযান

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৫, ১৫ জুলাই ২০২৫

দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের হাতে তিন বড় দুর্নীতি অভিযোগে সমন্বিত অভিযান

ছবি: জনকণ্ঠ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের উদ্যোগে আজ ১৫ জুলাই ২০২৫ তারিখে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথক এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন তদন্ত এবং রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট -এ নিয়োগ পরীক্ষা ব্যতিরেকেই চিকিৎসক নিয়োগের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে টিম শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইন, ২০২১, বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নিয়োগ বিধি ২০১১, বোর্ড সভার সিদ্ধান্তসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, বোর্ডের ২২তম সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ১ জুন ২০২৫ তারিখে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি, যার মাধ্যমে ৬ মাসের জন্য এডহক ভিত্তিতে আবাসিক মেডিকেল অফিসার নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একটি ৪ সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটির মাধ্যমে আবেদন যাচাই করে ৬৫ জনকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়। টিম জানতে পারে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই অবৈতনিক চিকিৎসক, এমডি শিক্ষার্থী এবং প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। টিম আরও জানতে পারে, প্রতিষ্ঠানটির জন্য এখনো নির্ধারিত কোনো প্রবিধান প্রণয়ন হয়নি। অভিযানে সংশ্লিষ্ট সকল রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বিশ্লেষণপূর্বক কমিশন বরাবর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

বিআরটিএ, গাজীপুর-এ দালালদের সঙ্গে যোগসাজশে ঘুসের বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, গাজীপুর হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে টিম গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে ছদ্মবেশে সেবাগ্রহীতা সেজে অবস্থান নিলে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র ধরা পরে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও কিছু প্রার্থীকে অনৈতিকভাবে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় পাশ নম্বরের চেয়ে কম নম্বর প্রাপ্ত প্রার্থীকেও পাশ করানোর প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি একাধিক খাতায় একই ব্যক্তির হাতের লেখা এবং শূন্য নম্বর পাওয়ার পরও উত্তীর্ণ দেখানোর দৃষ্টান্ত অভিযানকালে উদ্ঘাটিত হয়। টিম পরিলক্ষিত করে, বেশ কিছু খাতায় নাম, রোল নম্বর, ঠিকানা না থাকলেও পাশ দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি যেসব প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে, তাদের খাতা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দেখাতে ব্যর্থ হন, যা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ বহন করে। টিম অভিযানে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের প্রেক্ষিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত চেয়ে কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, মাদারীপুর-এর কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে এতিম শিক্ষার্থীদের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, মাদারীপুর হতে আজ অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অভিযোগে বর্ণিত হযরত শাহ মাদার (রঃ) দরগাহ শরীফ এতিমখানা সরেজমিন পরিদর্শন, গত ছয় বছরের বরাদ্দ ও রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, সমাজসেবা দপ্তর হতে বর্ণিত এতিমখানায় ২০১৯ সাল থেকে প্রতি মাসে জনপ্রতি ২,০০০/- টাকা হারে মোট ১৪৫ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত মোট বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়। অভিযানে আরও জানা যায়, বর্ণিত এতিমখানাটিতে কখনোই ৩০০ জন এতিম শিক্ষার্থী ছিলো না; বরং দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরিক্ত বরাদ্দ উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও এতিমখানার এফডিআর, অন্যান্য অনুদান ও এতিম শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত অর্থ ব্যক্তিগত ব্যবসায় ব্যবহারের প্রাথমিক সত্যতাও অভিযানকালে পাওয়া যায়। অভিযানকালে প্রাপ্ত তথ্যাবলির আলোকে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

আবির

×