ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বরাদ্দে অনিয়মে ক্ষোভ

ভূমিহীনদের ঘর গেল বিত্তবানদের দখলে

জামাল বাদশা, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ২২:৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫

ভূমিহীনদের ঘর গেল বিত্তবানদের দখলে

বরাদ্দকৃত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিতরণে ভয়াবহ অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

লালমনিরহাটের আদিতমারীর ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব ভেলাবাড়ী ও পুরান ভেলাবাড়ী গুচ্ছগ্রামে ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিতরণে ভয়াবহ অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, প্রকৃত ভূমিহীনদের বাদ দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের নামে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের ওই দুই এলাকায় পুরানো ব্যারাক ভেঙে মোট ৫২টি আধা-পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। পুরান ভেলাবাড়ীতে ৪৬টি এবং পূর্বভেলাবাড়ী কামারপাড়ায় ৬টি ঘর নির্মাণ হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছিল, পুরানো ব্যারাকের বাসিন্দা ও প্রকৃত ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর দেওয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকায় উঠে এসেছে বিত্তশালী ফজর আলী, আজাহার আলী ও হোসেন আলীর মতো ব্যক্তিদের নাম। স্থানীয়দের দাবি, ফজর আলীর পরিবারের রয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ জমি ও বাজারে দোকানঘর। আজাহার আলীর রয়েছে বাড়ি, জমি, দোকান এবং কৃষিজমি। হোসেন আলীর রয়েছে বড়সড় বাড়ি ও ব্যবসা এবং তার সন্তান প্রবাসে থাকেন। অথচ এসব ব্যক্তিরা ‘ভূমিহীন’ হিসেবে ঘর পেয়েছেন।
অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই সাতজন প্রকৃত ভূমিহীন শেফালী, আবুল, মনছুর, মো. কাসেম, হালিমা, বিউটি ও নাইরুল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ব্যারাকে বসবাস করলেও ঘর পাননি। বরং যারা ধনী ও প্রভাবশালী, তারা ঘর পেয়েছেন।
ষাটোর্ধ্ব শেফালী বেগম বলেন, ২৬ বছর ধরে ব্যারাকের ১ নম্বর ঘরে থাকি। প্রতিবন্ধী মানুষ আমি। আমার স্বামী মারা গেছেন ১৭ বছর আগে। সেই ঘরটাই দেওয়া হয়েছে বিত্তশালী ফজর আলীকে। আমি কোথায় যাব? ভূমিহীন লাইলী বেগম জানান, আমি কাজ করে খাই, একাধিকবার ঘরের জন্য আবেদন করেছিলাম। তৎকালীন সমবায় কর্মকর্তা ফজলে এলাহী ঘর দেওয়ার নাম করে টাকা চাইছিলেন। টাকা না থাকায় পাইনি।
অন্যদিকে বরাদ্দপ্রাপ্তদের পরিবার বলছে, তারা আগে ব্যারাকে ছিল বলে ঘর পেয়েছেন। আজাহার আলীর ছেলে শাহআলম বলেন, আমরা ব্যারাকে ছিলাম। এখন ব্যবসা করছি, বাড়ি করেছি। কিন্তু কাউকে টাকা দিইনি। ফজর আলীর ছেলে মমিনুরও একই কথা বলেন।
পূর্বভেলাবাড়ীতে ৬টি ঘরের চাবি বিতরণের সময় বিত্তবানদের বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী। তহসিলদার চাপে পড়ে চাবি না দিয়েই এলাকা ছাড়েন বলে জানা গেছে। স্থানীয় রিপন মিয়া ও শাহীন আলম বলেন, প্রকৃত ভূমিহীনরা ঘরের হকদার। অনিয়ম করে যারা নাম তুলেছে, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুন করে যাচাই করে ঘর দেওয়া হোক। অভিযুক্ত সাবেক সমবায় কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বলেন, আমি শুধু প্রকল্প মনিটরিং করেছি।

ঘরের তালিকা তৈরি করেছেন ইউএনও, এসিল্যান্ড ও তহসিলদার। বরাদ্দে আমার কোনো হাত নেই। বর্তমান ইউএনও বিধান কান্তি রায় বলেন, আমি তিন মাস আগে এখানে যোগ দিয়েছি। আগের ইউএনওর সময় তালিকা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, পূর্ব ভেলাবাড়ী এলাকায় ৪৬টি এবং কামারপাড়ায় ৬টি মিলিয়ে মোট ৫২টি আধা-পাকা ঘর নির্মিত হয়েছে। কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বরাদ্দ পেয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্যানেল হু

×