
ছবি: জনকণ্ঠ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপজেলা প্রশাসন হল সংশ্লিষ্ট উপজেলার কেন্দ্রবিন্দু। উপজেলার সকল প্রশাসনিক কাজ এবং সকল সরকারি নাগরিক সেবা এই উপজেলা প্রশাসন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
১৯৮১ সালে ফরিদপুর থানা থেকে পৃথককৃত এবং ১৯৮২ সালের উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা পুনর্গঠন অধ্যাদেশের বলে ভাঙ্গুড়া উপজেলা গঠিত হয়। এরপরই একটি প্রশাসন ভবন নির্মাণ করে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলে আসছিল। পরবর্তীতে প্রশাসনিক প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে ঝা-চকচকে ভবন নির্মাণ হলেও খেলার মাঠ, সীমানা প্রাচীর দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ ফটক থেকে শুরু করে অন্যান্য সৌন্দর্য্য বর্ধক উপাদানগুলো ছিল অবহেলিত।
উপজেলার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণ হবে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়- এ প্রত্যাশা সবারই। কিন্তু ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণের সেই দৃষ্টিনন্দন ভাবটা ছিল না। তবে সময়ের সাথে এর পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাজমুন নাহার অন্যান্য নিয়মতান্ত্রিক কাজের পাশাপাশি এই সৌন্দর্য বর্ধনে মন দিয়েছেন।
তিনি মন্তব্য করেন, "এই উপজেলা প্রশাসনে সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ বিভিন্ন সেবার প্রয়োজনে আসেন। তাদের মনে থাকে আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা। জরাজীর্ণ প্রাঙ্গণ তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে এ ব্যাপারটি আমি গুরুত্বের সাথে দেখছি। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলে সেবা প্রার্থীদের মন ভালো হয়ে যাবে।"
সরেজমিনে দেখা যায়, এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শ ও নির্দেশনায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়া শহীদ মিনার কে চমৎকারভাবে মেরামত করা হয়েছে। জাতীয় দিনগুলোতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মচারী। তিনি আরো জানান, এই শহীদ মিনারটি জরাজীর্ণ ও আগাছায় পরিপূর্ণ ছিল। সাপের ভয়ে কেউ সাধারণত ওদিকে যেতো না। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এটি এখন অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপনা।
এ ছাড়াও, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসনের পার্কের মাঠটিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাচ্চাদের খেলার জন্য পার্কটিতে বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায়। এই পার্কের মাঠে খেলতে দেখা যায় নয়না ও নাতাশা নামের দুই বোনকে।
তাদের বাসা উপজেলার নিকটেই। উপজেলা সেবাব্রতী কিন্ডারগার্টেন এর শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী নয়না বলেন," ইউএনও আন্টি দোলনা বানায়ে দিছেন! আমার এখানে খেলতে খুব ভালো লাগে।" দৃষ্টিনন্দন খেলনা এবং বিভিন্ন প্রাণীর আকর্ষণীয় ভাস্কর্য দিয়ে ঘেরা এই পার্কটি বিকেলে শিশুদের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে।
তাছাড়া, উন্নয়ন ও সংস্কারের ধারাবাহিকতায় উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে অবস্থিত গাছগুলোকে গোল করে বাধাই করে বসার উপযোগী করা হয়েছে যাতে বিকেলে মাঠে খেলতে আসা মানুষ ক্লান্ত হয়ে বসে বিশ্রাম নিতে পারে।
এই উপজেলার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যাংকার সহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা উপজেলায় অবস্থিত 'অফিসার্স ক্লাবে' সময় কাটান। এটির দশাও ছিল বেহাল। সেটিও সংস্কার করা হয়েছে। অন্যান্য সংস্কারের পাশাপাশি এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন ব্যাডমিন্টন কোর্ট করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে যত্রতত্র প্রবেশ করা যেত। যার ফলে সৌন্দর্যহানি হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতো। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে, উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনাটি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম। তিনি বলেন, 'সীমানা প্রাচীর নির্মাণের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে'। আর শুরু থেকেই কোন প্রবেশ ফটক না থাকলেও একটি দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ ফটকের কাজ চলমান রয়েছে।
কেউ কেউ প্রকল্পগুলোকে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বললেও তা নাকচ করে দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব উল আলম বাবলু বলেন , "এটি মোটেও অপচয় নয়। সৌন্দর্য ও প্রশাসনিক সেবা পরস্পরসম্পর্কিত। ব্যাপারটি মনস্তাত্ত্বিক। পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত পরিবেশ কার্যকর সেবা নিশ্চিত করে।"
দৃশ্যমান এই উন্নয়ন কার্যক্রমের অর্থায়ন সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাজমুন নাহার বলেন, "প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এই উপজেলার সকল মানুষের ভালো-মন্দ দেখ-ভালের দায়িত্ব আমার। এই কার্যক্রম গুলো সমগ্র উপজেলাবাসীর উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থায়নসহ সকল কর্মকান্ড স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা আমার আছে। এগুলোর অর্থায়নও তার ব্যতিক্রম নয়। এগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে হয়েছে।"
ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণের এই দৃশ্যমান পরিবর্তন শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য ও মনোগ্রাহী করে তুলছে।
শহীদ