ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

পৃথিবীর মত গ্রহ আবিষ্কার নাসার, পানির অস্তিত্বের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৫ জুলাই ২০২৫

পৃথিবীর মত গ্রহ আবিষ্কার নাসার, পানির অস্তিত্বের সম্ভাবনা

মার্চ ২০২৫ সালে নাসার ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট (TESS) এক অস্বাভাবিক তারার আলোর কমতির সিগন্যাল শনাক্ত করে। পরবর্তী অনুসন্ধানে এটি নিশ্চিত হয় TOI-1846 b নামক এক সুপার-আর্থ গ্রহের উপস্থিতি, যা উত্তর গোলার্ধের লীরা নক্ষত্রপুঞ্জে, পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

মরোক্কোর উকাইমেডেন পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের বিজ্ঞানী আবদারাহমান সোবকিউ ও তাঁর সহকর্মীরা চারটি মহাদেশের টেলিস্কোপ পর্যবেক্ষণ ও আলো পরিমাপের সঙ্গে TESS এর তথ্য সংমিশ্রণ করে এই গ্রহের আবিষ্কার নিশ্চিত করেন।

TOI-1846 b: লাল বামন নক্ষত্রের প্রেক্ষাপটে এক অনন্য গ্রহ

২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল উৎক্ষেপিত TESS স্যাটেলাইট ধীরে ধীরে আকাশের বিস্তীর্ণ অংশ পর্যবেক্ষণ করে, তারার সামনে গ্রহের অতিক্রমের ফলে সৃষ্টি হওয়া ক্ষুদ্র আলোর কমতি শনাক্ত করে থাকে। TOI-1846 তারাটি একটি লাল বামন নক্ষত্র, যার ভর ও আয়তন সূর্যের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

গ্রহটির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুণ এবং ভর প্রায় চারগুণ, যা ইঙ্গিত দেয় যে এটি সম্পূর্ণরূপে পাথুরে নয় বরং বরফের স্তরসহ পাতলা বায়ুমণ্ডল বা অগভীর মহাসাগর থাকতে পারে। গ্রহটি তার সূর্যের প্রতি একটি নির্দিষ্ট পার্শ্ব মুখ করে থাকার কারণে উচ্চ তাপমাত্রার পরেও জলীয় উপস্থিতি থাকা সম্ভব বলে অনুমান করা হচ্ছে।

গবেষণার গুরুত্ব ও বৈজ্ঞানিক প্রভাব

TOI-1846 b গ্রহের অনন্য ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে বের করে গ্রহের গঠন ও বিকাশ প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করবে। বিশেষ করে, এটি ‘রেডিয়াস ভ্যালি’ নামে পরিচিত, যেখানে পৃথিবী সদৃশ গ্রহ ও গ্যাসাচ্ছন্ন সাব-নেপচুন গ্রহের মধ্যে আকৃতির ফাঁক বিদ্যমান থাকে, তা বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া, গ্রহটির সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান এবং তার পাতলা গ্যাসীয় আবরণ মহাকাশ গবেষকদের জলীয় বাষ্প ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস সনাক্তকরণে সহায়ক হবে।

অগ্রগতির পথ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিজ্ঞানীরা জেমিনি নর্থ অবজারভেটরির MAROON-X যন্ত্র ব্যবহার করে রেডিয়াল ভেলোসিটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গ্রহটির ভর নির্ধারণ করবেন। পাশাপাশি, গ্রহটির কক্ষপথে অন্যান্য গ্রহের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে।

যদিও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গ্রহটিতে প্রাণের সম্ভাবনা কম, তবুও এর গবেষণা লাল বামন নক্ষত্রপুঞ্জের গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলীয় ও জলীয় অবস্থার বিকাশ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করবে। ভবিষ্যতে, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) এর মাধ্যমে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে, যা জলীয় বাষ্প, মিথেন বা সালফার ডাই অক্সাইড সনাক্ত করতে সক্ষম হবে।

Jahan

×