
প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন আশার আলো দেখা গেছে প্রাণিজ বিষে। সাপ, বিচ্ছু ও মাকড়সার মতো প্রাণীর বিষ থেকে তৈরি ক্ষুদ্র প্রোটিন—ভেনম এনক্রিপটেড পেপটাইডস (VEPs)—ব্যবহার করে একদল গবেষক সম্ভাব্য অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির পথ খুঁজে পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডিপ-লার্নিং অ্যালগরিদম APEX-এর মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জন করেছেন।
এই গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল Nature Communications-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকদের মতে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এক কোটিরও বেশি মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণে মৃত্যুবরণ করে। এই সমস্যা মোকাবেলায় তারা ৪ কোটির বেশি ভেনম-ভিত্তিক প্রোটিন বিশ্লেষণ করেন APEX অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি ৩৮৬টি যৌগ চিহ্নিত করে, যেগুলো পরবর্তী প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
"ভেনম প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি, অথচ এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সম্ভাবনাগুলো এখনও প্রায় অঅনুসন্ধানিত," বলেন গবেষণার সিনিয়র লেখক সিজার ডি লা ফুয়েন্তে, পিএইচ.ডি., যিনি মনোবিজ্ঞান, অণুজীববিজ্ঞান, বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক।
গবেষণার অগ্রগতি ও ফলাফল
এআই দ্বারা নির্বাচিত যৌগগুলোর মধ্যে থেকে গবেষকরা ৫৮টি ভেনম পেপটাইড ল্যাবরেটরিতে সংশ্লেষ করেন এবং পরীক্ষা করেন। তার মধ্যে ৫৩টি পেপটাইড অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া—যেমন Escherichia coli এবং Staphylococcus aureus—নষ্ট করতে সক্ষম হয়, অথচ সেগুলো মানব রক্তকণিকার জন্য ক্ষতিকর ছিল না।
গবেষণায় সহ-লেখক মার্সেলো টরেস বলেন, “কম্পিউটার ভিত্তিক বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রচলিত ল্যাব পরীক্ষার সমন্বয়ে এটি ভেনম থেকে অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনের সবচেয়ে বিস্তৃত গবেষণাগুলোর একটি।”
এ গবেষণায় প্রায় ২,০০০ নতুন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মোটিফের ম্যাপিং করা হয়েছে, যেগুলো ক্ষুদ্র অ্যামিনো অ্যাসিডের বিন্যাস—ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে বিশেষভাবে কার্যকর।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গবেষণা দলটি বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করছে, যাতে ওষুধের গঠন আরও উন্নত করা যায়। মেডিসিনাল কেমিস্ট্রির মাধ্যমে এই যৌগগুলোকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে বাজারজাত করার সম্ভাবনাও তারা বিবেচনায় নিচ্ছে।
বিশ্ব যখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র খুঁজছে, তখন এই গবেষণা ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি বড় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
Jahan