ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

৩৫ বছরের পরেই অবসর নিতে চাচ্ছেন? কিন্তু বাস্তবতা আপনাকেও ধাক্কা দিতে পারে

প্রকাশিত: ২২:০০, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২২:০১, ১৫ জুলাই ২০২৫

৩৫ বছরের পরেই অবসর নিতে চাচ্ছেন? কিন্তু বাস্তবতা আপনাকেও ধাক্কা দিতে পারে

ছবি:সংগৃহীত

 ৩৫ বছর বয়সে আমি ভাবতাম—জীবনে আমি জয়ী। প্রায় ৩০০ কোটি ভিয়েতনামী ডং (প্রায় ১.২ লাখ ডলার) সঞ্চয় ছিল, নিজের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল, এবং একটি উচ্চ বেতনের টেক চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এই তো স্বাধীনতা, এই তো জীবন।

FIRE (Financial Independence, Retire Early) আন্দোলনের অনুপ্রেরণায়, আমি স্বপ্ন দেখতাম কাজের বেড়াজাল থেকে মুক্তির। মনে করতাম, এবার হয়তো হোই আন বা দা লাতে গিয়ে শান্তির জীবন পাব, বই পড়ব, কফি খাব, ছবি আঁকব—সবকিছু যা কাজের চাপে পিছিয়ে ছিল।

প্রথমদিকে সব কিছু স্বপ্নের মতোই লাগছিল। ঘুম থেকে উঠতাম যখন ইচ্ছা, ভ্রমণ করতাম, ব্যায়াম করতাম, ছবি তুলতাম, ব্লগ লিখতাম, আঁকতাম, এমনকি অনলাইন শেখানোর কাজও করতাম। কিন্তু সময় গড়াতে না গড়াতেই এক অদ্ভুত শুন্যতা ঘিরে ধরল। বন্ধুরা সবাই তাদের কাজ, প্রজেক্ট, অফিসের গল্প নিয়ে ব্যস্ত। আর আমার গল্পগুলো যেন ফুরিয়ে গেছে—সব বই পড়া শেষ, ভ্রমণও কম নয়, শখগুলোও আর আনন্দ দেয় না।

চেষ্টা করেছিলাম সেই ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে—লেখালেখি, বিনিয়োগ, অনলাইন কোর্স—কিন্তু সেই গভীর সন্তুষ্টি কিছুতেই ফিরল না। ৪০ এর কাছাকাছি এসে বুঝলাম, আমি আবার চাই চ্যালেঞ্জ, কাঠামো, উদ্দেশ্য। শুধু বাঁচা নয়, কোনো অর্থবহ উপায়ে বাঁচতে চাই।

কিন্তু আবার কাজের জগতে ফিরে যাওয়াটা সহজ ছিল না। দীর্ঘ সময় কাজের বাইরে থাকায় স্কিলগুলো পুরনো হয়ে গিয়েছিল। নিয়োগকারীরা আমাকে দেখত এক ধরনের "ঝুঁকি" হিসেবে। বলত, “আপনি কি এখনকার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন?”

একের পর এক চাকরির দরজায় ধাক্কা খেতে খেতে আমি বুঝতে পারলাম—এটা শুধু চাকরি খোঁজার লড়াই নয়, এটা আমার অস্তিত্বের লড়াই। এত বছর পর নিজেকে আবার প্রতিষ্ঠিত করা, একা হাতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা—অত্যন্ত কঠিন।

আজও আমার হাতে যথেষ্ট সঞ্চয় আছে, দিন চলে যায়। কিন্তু আমি শিখেছি, অবসর মানেই শুধু কাজ থেকে মুক্তি নয়—এটা এমন এক স্বাধীনতা হওয়া উচিত যার সঙ্গে থাকে লক্ষ্য, দায়িত্ব ও আত্মতৃপ্তি। হঠাৎ করে থেমে যাওয়া নয়, বরং ধীরে ধীরে গতি কমানো, শিখতে থাকা, ছোটখাটো কাজে যুক্ত থাকা—এইসবই হয়তো উচিত ছিল।

আজ যারা আগেভাগেই অবসর নেওয়ার কথা ভাবছেন, তারা নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন—“আমি আসলেই জানি তো, অবসরের পরে জীবনের মানে কী?” কারণ কখনও কখনও আমরা যে "মুক্তি"র স্বপ্ন দেখি, সেটা আসলে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা বা শুন্যতা, যার জন্য আমরা প্রস্তুত নই।

এই অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শুধু অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যথেষ্ট নয়। জীবনের মানে গড়ে ওঠে আমরা কীভাবে আমাদের সময়কে অর্থবহ করে তুলি তার ওপর। অবসর মানেই থেমে যাওয়া নয়—হতে পারে সেটাই নতুন করে শুরু করার সুযোগ।

 
 

মারিয়া

×