ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

শিশুদের জন্য কম সময়ে বেশি মনে রাখার ৫টি সেরা পড়াশোনার কৌশল

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ১৫ জুলাই ২০২৫

শিশুদের জন্য কম সময়ে বেশি মনে রাখার ৫টি সেরা পড়াশোনার কৌশল

ছ‌বি: সংগ্রহীত।

আজকাল অনেক শিশুই পড়ালেখা, টিউশন আর নিরন্তর পুনরাবৃত্তির চাপে নাজেহাল। সাধারণ একটি ধারণা হচ্ছে, যত বেশি সময় ধরে পড়া যায়, তত বেশি শেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বেশি সময় নয়—বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পড়লে কম সময়ে বেশি শেখা সম্ভব।

শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ও জ্ঞান বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করলে শিক্ষাজীবন হতে পারে আরও আনন্দদায়ক, কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী। এখানে তুলে ধরা হলো ৫টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পড়ার কৌশল, যা শিশুদের কম সময়ে বেশি মনে রাখতে সাহায্য করে—

১. রিট্রিভাল প্র্যাকটিস (স্মৃতি থেকে তথ্য recall করার অভ্যাস):
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হেনরি রোডিজারের গবেষণায় দেখা গেছে, বই না দেখে তথ্য মনে করার চেষ্টা করলে মস্তিষ্কের স্মৃতি শক্তি অনেক বেশি উন্নত হয়। কোনো বিষয় পড়ার পর সেটি চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করা, ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করা বা খেলনা বা ভাইবোনকে বিষয়টি বোঝানোর মাধ্যমে চর্চা করাই এই কৌশলের মূল।

২. স্পেসড রিপিটিশন (বিচ্ছিন্ন সময়ে পুনরাবৃত্তি):
‘ভুলে যাওয়ার বক্ররেখা’ নিয়ে গবেষণা করা হারমান এববিংহাউস প্রমাণ করেছেন, সময় ভাগ করে বিষয়গুলো পুনরায় পড়া অনেক বেশি কার্যকর। যেমন: প্রথম দিনে ৫ মিনিট, তারপর তৃতীয় দিন এবং ষষ্ঠ দিনে আবার পড়লে বিষয়টি গভীরভাবে মস্তিষ্কে গেঁথে যায়।

৩. ইন্টারলিভিং (বিভিন্ন বিষয় মিশিয়ে পড়া):
একটানা এক বিষয়ে না পড়ে, বিভিন্ন বিষয় একসঙ্গে মিলিয়ে পড়ার কৌশলকে বলে ইন্টারলিভিং। উদাহরণস্বরূপ, ৩০ মিনিটের পড়াশোনার সময়কে ভাগ করে ১০ মিনিট বিজ্ঞান, ১০ মিনিট ইতিহাস, ১০ মিনিট গণিত পড়া যেতে পারে। এতে মস্তিষ্ক একাধিক বিষয়ের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে শেখে, ফলে সমস্যার সমাধান ক্ষমতা বাড়ে এবং দীর্ঘস্থায়ী শেখা নিশ্চিত হয়।

৪. ডুয়াল কোডিং (চিত্র ও লেখার সমন্বয়ে শেখা):
কগনিটিভ মনোবিজ্ঞানী অ্যালান পেইভিওর মতে, লেখার সঙ্গে চিত্র বা ভিডিও ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয়। যেমন: সৌরজগত সম্পর্কে শিখতে গেলে শুধুমাত্র লেখা পড়ার পরিবর্তে তার পাশে ছবি আঁকা, ভিডিও দেখা বা ফ্লোচার্ট তৈরি করলে বিষয়টি আরও ভালোভাবে মনে রাখা সম্ভব। এমনকি ইতিহাসের একটি ঘটনা কমিক স্ট্রিপে রূপান্তর করাও হতে পারে কার্যকর।

৫. প্রোটেজে এফেক্ট (শেখানোর মাধ্যমে শেখা):
যখন শিশুরা অন্যকে শেখায়, তখন তারা আরও মনোযোগ দিয়ে শেখে, তথ্যগুলো আরও গোছানোভাবে মনে রাখে এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মনে রাখতে পারে। যেমন: ছোট ভাইবোনকে গুণন শিখানো বা খেলনা ক্লাসরুমে শিক্ষক সেজে পড়ানো—এই ধরনের কর্মকাণ্ড শিশুর শেখার মান বাড়ায় এবং জ্ঞানকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কৌশল শুধু পড়ালেখাকে সহজ করে না, বরং একঘেয়েমি দূর করে শেখাকে আনন্দময় করে তোলে। তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত শিশুদের এসব স্মার্ট পদ্ধতিতে অনুপ্রাণিত করা।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মিরাজ খান

×