
ছবিঃ সংগৃহীত
ওড়িশার বালাসোর জেলার ফকির মোহন স্বায়ত্তশাসিত কলেজের এক ২০ বছর বয়সী ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সোমবার রাতে ভুবনেশ্বর এইমস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মেয়েটি কলেজের একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহ আগে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। কিন্তু কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (ICC) অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাকে ক্লিন চিট দেয়। এই ঘটনায় হতাশ হয়ে শনিবার কলেজের প্রিন্সিপালের কক্ষের সামনে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেন ছাত্রীটি।
চিকিৎসা প্রতিবেদন বলছে, “১২ জুলাই বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে বন্ধুর সহায়তায় তাকে ভর্তি করা হয়। তাকে ইনটিউবেশনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হলেও অবস্থা সংকটাপন্নই ছিল। ১৪ জুলাই রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”
ঘটনাটি নিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মজিহি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “দোষীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভিকটিমের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ভুবনেশ্বর এইমসে যান। ওড়িশার রাজ্যপাল হরি বাবু কম্ভমপতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকারকে জরুরি, মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”
ঘটনার পেছনের বিবরণ
ছাত্রীটি ছিলেন কলেজের বি.এড ইন্টিগ্রেটেড দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগের প্রধান সমীর কুমার সাহু। অভিযোগে বলা হয়, সাহু ছাত্রীটির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন এবং তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেন।
ছাত্রীটি ছিলেন আরএসএস ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন ABVP-এর সদস্য। তিনি মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জাতীয় মহিলা কমিশন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
ভিকটিমের বাবা, একজন কলেজকর্মচারী, অভিযোগ করেন—কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর বিশ্বাস না থাকায় মেয়েটি তাকে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছিলেন।
শনিবার আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পর সাহুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে কলেজের প্রিন্সিপাল দিলীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, কারণ তিনি অভিযোগ ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন।
১৩ জুলাই জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) বিষয়টি নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করে এবং তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট চায়।
এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কংগ্রেস ও BJD ছাত্র সংগঠন কলেজ ঘেরাও করে। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
সরকারের নির্দেশে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি (ICC) গঠনের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
ভিকটিমের যন্ত্রণা ও ব্যর্থ তদন্ত প্রক্রিয়া
মেয়েটির বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ছয় মাস ধরেই সাহু তাকে যৌন হয়রানি করে আসছিল। একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন ছাত্রীটি।
২৫ জুন X (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে সাহায্য চেয়েছিলেন ছাত্রীটি, কিন্তু সেটিও কেউ আমলে নেয়নি। ১০ জুলাই কলেজের ICC সাহুকে নির্দোষ ঘোষণা করে। তদন্ত ছিল পক্ষপাতদুষ্ট, অভিযোগ করেন শিক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা। ১০ জুলাই বাবার সঙ্গে শেষ কথোপকথনে মেয়েটি বলেন, “ওরা আমাকে শান্তিতে বাঁচতেও দেবে না।”
১৩ জুলাই আবার প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, তাকে অভিযোগ তুলে নিতে বলা হয় এবং রুস্টিকেট করার হুমকি দেওয়া হয়। এরপরেই ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।
নোভা