
ছবি: প্রতীকী
বিদেশে পড়তে যাওয়া অনেকের জীবনের বড় স্বপ্ন। তবে যাদের স্ত্রী, সন্তান বা পরিবার রয়েছে, তাদের জন্য প্রিয়জনদের ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়া অনেক সময় কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রেই এই মানসিক চাপ বিদেশে উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সুখবর হচ্ছে— বিশ্বের কিছু দেশ এমন সুযোগ তৈরি করেছে, যেখানে আপনি শুধু পড়াশোনা নয়, সঙ্গে করে পরিবারও নিয়ে যেতে পারবেন।
এমন পাঁচটি দেশের তালিকা নিচে দেওয়া হলো, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্ত্রী-সন্তানসহ পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন। এসব দেশের বেশিরভাগই পরিবারকে সঙ্গে নেওয়ার অনুমতির পাশাপাশি তাদের কাজ ও পড়াশোনার সুবিধাও দিচ্ছে।
১. জার্মানি
উচ্চমানের শিক্ষা, পরিবারবান্ধব নীতি ও মজবুত অর্থনীতির জন্য জার্মানি ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ‘ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা’-এর মাধ্যমে তাদের পরিবারকে সঙ্গে নিতে পারেন।
যা লাগবে:
-
পর্যাপ্ত অর্থ ও থাকার ব্যবস্থা প্রমাণ
-
বৈধ বিয়ের সনদ
-
স্বামী বা স্ত্রীর বয়স ১৮-এর বেশি এবং কমপক্ষে A1 লেভেলের জার্মান ভাষাজ্ঞান
-
শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে এক বছরের কোর্সে ভর্তি থাকতে হবে
স্বামী বা স্ত্রী পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ পাবেন। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা ও গণপরিবহনব্যবস্থাও বেশ উন্নত।
২. অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার ‘স্টুডেন্ট ভিসা (সাবক্লাস ৫০০)’ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে নমনীয় পারিবারিক ভিসা সুবিধা দেয়। শুরুতেই অথবা পড়াশোনার মাঝেও পরিবারকে যুক্ত করার সুযোগ আছে।
যোগ্যতা:
-
স্ত্রী/স্বামী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী অবিবাহিত সন্তান
-
বিয়ের সনদ, জন্ম সনদ ও যৌথ ঠিকানার প্রমাণ
-
পর্যাপ্ত অর্থ ও স্বাস্থ্যবীমার কাগজপত্র
-
সন্তানদের জন্য স্কুলে ভর্তি সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)
কাজের সুযোগ:
স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করলে সঙ্গী প্রতি দুই সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। আর পোস্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে থাকলে কাজের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
৩. কানাডা
পরিবারকেন্দ্রিক ও বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্য কানাডা বরাবরই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পছন্দ। এখানে ‘স্পাউসাল ওপেন ওয়ার্ক পারমিট’ ও ‘ডিপেনডেন্ট চাইল্ড ভিসা’-এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে যেতে পারেন।
যা প্রয়োজন:
-
বৈধ স্টুডেন্ট পারমিট
-
কমপক্ষে এক বছর আগের বিয়ের সনদ
-
স্বামীর/স্ত্রীর ভাষাজ্ঞান যাচাইয়ের সনদ
-
আর্থিক সামর্থ্য ও সম্পর্কের প্রমাণ
স্বামী বা স্ত্রী পূর্ণকালীন কাজ করতে পারেন, আর সন্তানরা স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হতে পারে।
৪. ফিনল্যান্ড
‘বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ’ হিসেবে খ্যাত ফিনল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরিবারের জন্যও রয়েছে উন্মুক্ত।
প্রয়োজনীয়তা:
-
বৈধ পাসপোর্ট, বিয়ের বা জন্ম সনদ
-
ফিনিশ রেসিডেন্স অ্যাপ্লিকেশন (PK1 Plus ফর্ম)
-
পর্যাপ্ত অর্থ ও থাকার ব্যবস্থা
একবার অনুমতি পেলে স্বামী বা স্ত্রী পূর্ণকালীন চাকরি করতে পারেন। নিরাপদ পরিবেশ ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে ফিনল্যান্ড পারিবারিকভাবে বসবাসের জন্য উপযুক্ত।
৫. নিউজিল্যান্ড
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নত শিক্ষা ও পরিবারবান্ধব ভিসানীতির জন্য নিউজিল্যান্ড অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য।
মূল সুবিধাসমূহ:
-
সন্তানদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় কোনও টিউশন ফি নেই; তারা স্থানীয় শিক্ষার্থীর মর্যাদা পায়।
-
ছয় মাসের বেশি অবস্থান করলে স্বামী বা স্ত্রী ‘পার্টনার অব এ ওয়ার্কার ওয়ার্ক ভিসা’-এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এতে তারা যেকোনো পেশায় পূর্ণকালীন কাজ বা ব্যবসা চালাতে পারেন।
বিদেশে পড়াশোনার মানে এখন আর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা নয়। সঠিক দেশ বেছে নিলে আপনি আপনার একাডেমিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন পরিবারকে সঙ্গে নিয়েই। জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড— এই পাঁচটি দেশ প্রমাণ করেছে, উচ্চশিক্ষা ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে আর কোন দ্বন্দ্ব নেই।
এম.কে.