ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

ফেসবুক হ্যাকিং প্রতিরোধের ৭টি অজানা উপায়

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১৫ জুলাই ২০২৫

ফেসবুক হ্যাকিং প্রতিরোধের ৭টি অজানা উপায়

ছ‌বি: প্রতীকী

আজকের যুগে ফেসবুক শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত ছবি, বার্তা, পেমেন্ট ইনফো, ব্যবসার পেজ— সবকিছুই এখন ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে জড়িত। তাই এই অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলে শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেকেই সাধারণ কিছু সতর্কতা মানলেও কিছু অজানা ও কার্যকর উপায় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে ফেসবুক হ্যাকিং থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যায়।

প্রথমেই যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো—অন্য কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপের সঙ্গে ফেসবুক লগইন ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত সেই সাইটটি আসল কি না। অনেক হ্যাকার ভুয়া বা ক্লোন করা ওয়েবসাইট তৈরি করে, যেগুলো দেখতে হুবহু ফেসবুকের মতো। আপনি যদি ভুল করে সেখানে ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আপনার তথ্য চলে যায় হ্যাকারদের হাতে। তাই যেকোনো লিংকে ক্লিক করার আগে এবং লগইন করার আগে ওয়েবসাইটের ঠিকানাটি ভালো করে লক্ষ্য করুন। সন্দেহজনক মনে হলে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন।

অনেকেই একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করেন, যেমন ফেসবুক, ইমেইল ও অন্যান্য অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড থাকে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কোনো একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে বাকিগুলোর নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে। তাই প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা, জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। পাসওয়ার্ডে ছোট হাতের অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্ন (@, #, $, %) একসঙ্গে থাকলে তা অনেক বেশি সুরক্ষিত হয়।

ফেসবুকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো "লগইন অ্যালার্ট"। এই সেটিং চালু করে রাখলে, কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে নতুন ডিভাইস বা ব্রাউজার থেকে লগইন করার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে আপনি একটি নোটিফিকেশন বা ইমেইল পাবেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার অ্যাকাউন্টে কেউ প্রবেশের চেষ্টা করছে কি না। এই ফিচারটি চালু রাখতে ফেসবুকের Security and Login সেটিংসে গিয়ে Login Alerts অন করে নিতে হবে।

অনেকেই জানেন না, ফেসবুকে "Trusted Contacts" নামের একটি সুবিধা আছে। এতে আপনি ৩ থেকে ৫ জন বিশ্বস্ত বন্ধুকে নির্বাচন করতে পারেন, যারা আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশে সহায়তা করতে পারবেন যদি আপনি কখনো পাসওয়ার্ড ভুলে যান বা অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়। এই অপশনটি আগে থেকেই সেট করে রাখা উচিত, কারণ হ্যাকিংয়ের পর এই ধরনের ব্যাকআপ মাধ্যম না থাকলে অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় ধাপে নিরাপত্তা বা Two-Factor Authentication (2FA) বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। এটি চালু করলে, আপনি পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরেও একটি কোড পাবেন ফোনে বা অ্যাপের মাধ্যমে, যা ছাড়া অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে না। ফলে কেউ যদি আপনার পাসওয়ার্ড জেনেও যায়, সে অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না যদি না তার কাছে সেই কোড থাকে। এই সেটিংটি Facebook Settings > Security and Login > Two-Factor Authentication-এ গিয়ে খুব সহজে চালু করা যায়।

অনেকে অজান্তেই কিছু অ্যাপ বা গেমে "Allow Access" দিয়ে দেন ফেসবুক লগইনের মাধ্যমে। এসব অ্যাপ আপনার তথ্য চুরি করতে পারে। তাই মাঝে মাঝে ফেসবুকের Settings > Apps and Websites-এ গিয়ে দেখে নেওয়া উচিত কোন কোন অ্যাপ অ্যাক্সেস পাচ্ছে এবং প্রয়োজন ছাড়া সেগুলো রিমুভ করে দেওয়া উচিত। এতে করে আপনি অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

আপনি যদি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করেন, তাহলে সেটা যেন নিরাপদ হয় তা নিশ্চিত করুন। কারণ হ্যাকাররা অনেক সময় পাবলিক ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ডাটা চুরি করে থাকে। চেষ্টা করুন VPN ব্যবহার করতে এবং কখনোই ক্যাফে বা অজানা নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ না করতে।

এই সাতটি অজানা বা কম ব্যবহৃত উপায় অবলম্বন করলে আপনি অনেকটাই ফেসবুক হ্যাকিং থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন। শুধু প্রযুক্তি নয়, সচেতনতা এবং নিয়মিত নিরাপত্তা যাচাই-ই পারে আপনাকে ডিজিটাল বিপদ থেকে রক্ষা করতে। মনে রাখবেন, একটু সতর্কতাই দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা।

এম.কে.

×