
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
আর্থিক সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রায় ১০ বছররের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ীর একমাত্র পৌর শিশু হাসপাতাল। হাসপাতালের সামনে আগাছা ,লতাপাতা গজিয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আর পাশেই প্রস্রাব করে স্থানীয় দোকানি-পথচারীরা । ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে এক তলা ভবনের চার কক্ষ বিশিষ্ট হাসপাতালটি বর্তমানে জরাজীর্ণ ভূতের বাড়িতে রূপ নিয়েছে। জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল না থাকায় নবজাতকসহ শিশুদের চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে পাশের জেলা ফরিদপুরে। এতে মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্বজনরা।
রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্র জানা গেছে , ১৯৯৫ সালে রাজবাড়ী পৌরসভার উদ্যোগে শহরের নতুনবাজার এলাকায় পৌর শিশু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর সেখানে একজন চিকিৎসক রোগী দেখে শুধু ব্যবস্থাপত্র দিতেন ২২ বছর।
সবশেষ ওই হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুর রশিদ। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়ার পর হাসপাতালের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
ডা. আবদুর রশিদ জানিয়েছেন , তিনি ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে রাজবাড়ী পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। পৌরসভার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পৌর শিশু হাসপাতালে (ছুটির দিন বাদে) প্রতিদিন ১১টা থেকে ১ টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে রোগী দেখতেন। রোগী দেখে শুধু ব্যবস্থাপত্র দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কার্যক্রম। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতেন শিশু হাসপাতাল থেকে। তারা ঔষধ কিনতেন বাইরের দোকান থেকে ।
সরেজমিন দেখা যায়, ময়লা-আবর্জনা আর আগাছায় চারপাশ ভরে যাওয়ায় ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে শিশু হাসপাতালটি। স্থানীয়রা প্রস্রাব করেন হাসপাতালের পাশে । শিশু হাসপাতাল মাঠে আগাছা ,লতাপাত আর আগাছায় জনা জীর্ণ হয়ে রয়েছে। ভেঙ্গে পড়ছে বিল্ডিং এর পলেস্তার, ভেঙ্গে রয়েছে হাসপাতালে জানালা,দরজা । তবে জানা গেছে , পৌরসভা থেকে টিকা কার্যক্রম চলে এই হাসপাতালেই ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলা মিলিয়ে ১২ লাখ মানুষের এই জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল না থাকায় প্রতিনিয়তই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। শিশুদের জরুরি চিকিৎসার জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গেলে বেশির ভাগ সময়ই পাশের জেলা ফরিদপুরে পাঠানো হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার সহজে অন্য স্থানে যেতে পারলেও বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষজন।
বন্ধ থাকা হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল হিসেবে চালু করে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হোক রাজবাড়ী জেলাবাসীর ।
রাজবাড়ী পৌরসভার বাসিন্দা আনিস ব্যাপারী জানান , হাসপাতালটি যখন চালু ছিল, তখন শিশুদের নিয়ে সেখানে গেলে তাৎক্ষণিক ডাক্তার দেখানো যেত এখন সেই সুযোগ নেই। সদর হাসপাতালই আমাদের ভরসা। কিন্তু সেখানে ভালো শিশু চিকিৎসক নেই। এ জন্য শিশু হাসপাতালটি চালু করা খুবই জরুরি। একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল রাজবাড়ীতে বিশেষ প্রয়োজন। এখানে শিশু হাসপাতাল চলাকালীন যায়গাটি খুব জমজমাট ছিলো ,পাশে শিশু হাসপাতাল মাঠ সেটিও জঙ্গলে ভরে গেছে। এখানে মানুষ প্রস্রাব করে, যায়গাটা মনে হয় ভূতের বাড়ি। বিগত সরকার এই হাসপাতালে দৃষ্টি দেয়নি। আমাদের দাবি হাসপাতালটি আবার চালু করা হোক।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ জানান, প্রায় ১০ বছরের মত সময় বন্ধ এই শিশু হাসপাতালটি । রাতে এখানে উঠতি বয়েসের ছেলেরা নেশা করে আর দিনে স্থানীয়রা প্রস্রাব্র করে । কিন্তু এ শিশু হাসপাতাল টি যখন চালু ছিলো তখন অনেক মায়ে'রা তাদের সন্তানদের নিয়ে এখানে চিকিৎসার জন্য আসতেন। আমরা চাই জেলার একমাত্র শিশু হাসপাতালটি আবার সংস্কার করে চালু করা হোক। '
এ বিষয়ে রাজবাড়ী পৌরসভার প্রশাসক মো.মাজহারুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন, আমি শুনেছি শিশু হাসপাতালটি দশ বছরের অধিক সময় বন্ধ । আমি হাসপাতালটি পরিদর্শনে যাব। সামনের মিটিং এ বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। ''
মিরাজ খান