
ছবি: সংগৃহীত
উচ্চ রক্তচাপকে বলে হাইপারটেনশন। যখন রক্ত আমাদের শরীরের রক্তনালির ভেতর দিয়ে খুব বেশি জোরে চাপ দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখনই এই সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন এই চাপ বেশি থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, চোখে দৃষ্টি কমে যাওয়া, কিডনি নষ্ট হওয়া বা পায়ে রক্ত চলাচলের সমস্যা হতে পারে।
স্বাভাবিক রক্তচাপ: ১২০/৮০ mm Hg-এর নিচে।
যদি সিস্টলিক (উপরের সংখ্যা) ১২০–১২৯ হয় এবং ডায়াস্টলিক (নিচের সংখ্যা) ৮০-এর নিচে থাকে, তবে সেটি উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক ধাপ।
যদি সিস্টলিক ১৩০ বা তার বেশি হয় বা ডায়াস্টলিক ৮০ বা তার বেশি হয়, এবং তা দীর্ঘদিন থাকে, তাহলে সেটা উচ্চ রক্তচাপ।
অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনও উপসর্গ থাকে না। তাই অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তারা এই সমস্যায় ভুগছেন। বেশিরভাগ সময় রক্তচাপ তখনই ধরা পড়ে যখন বড় কোনও সমস্যা দেখা দেয়, যেমন স্ট্রোক। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা খুব জরুরি।
নিচে কিছু সহজ অভ্যাস দেওয়া হলো যেগুলো মেনে চললে ঔষধ ছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব:
১. ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দিন
সিগারেট বা বিড়ি খাওয়া এবং তার ধোঁয়া শরীরের রক্তনালিকে ক্ষতি করে। ধূমপান ছাড়লে হার্ট ও রক্তনালী দ্রুত সেরে উঠতে শুরু করে। ১ বছরের মধ্যে ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়, আর ৫ বছরের মধ্যে ঝুঁকি একেবারে কমে যায়।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
আপনার শরীরের ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তবে তা রক্তচাপ বাড়ায়। সামান্য ৫–১০% ওজন কমালেও অনেক উপকার হয়। জিম না করলেও প্রতিদিন হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম শুরু করুন।
৩. মদ্যপান করবেন না
অ্যালকোহল বা মদ উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়। এটি থেকে দূরে থাকাই ভালো।
৪. খাবারে লবণ কমান
দিনে ১.৫ গ্রাম বা তার কম লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন। বেশি লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
৫. পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খান
যেমন: কলা, আলু, মিষ্টি আলু, তরমুজ, অ্যাভোকাডো। এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৬. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা সাইকেল চালান। এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং রক্তচাপ কমবে।
৭. মানসিক চাপ কমান
চিন্তা ও টেনশন রক্তচাপ বাড়ায়। নিয়মিত বিশ্রাম নিন, গভীর নিঃশ্বাস নিন, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। ঘুমও ঠিকমতো হতে হবে—প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা।
৮. নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন
বাড়িতে নিজের রক্তচাপ নিয়মিত মাপুন। যেকোনো পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছামতো ঔষধ বন্ধ বা কমাবেন না।
৯. বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখান
উচ্চ রক্তচাপ হার্ট, কিডনি, চোখ ও মস্তিষ্কে সমস্যা করতে পারে। তাই নিয়মিত কার্ডিওলজিস্ট, কিডনি বা চোখের ডাক্তার দেখানো ভালো।
১০. কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা লাগতে পারে
যাদের রক্তচাপ খুব বেশি এবং সহজে নিয়ন্ত্রণে আসছে না, তাদের জন্য কিডনির রক্তনালিতে অপারেশন, CPAP থেরাপি বা বিশেষ চিকিৎসা দরকার হতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা মানেই সুস্থ জীবন। এগুলো কোনো শাস্তি নয়, বরং ভালো জীবনের জন্য দরকারি কিছু সহজ অভ্যাস। একটু সচেতন হলে জীবন হবে দীর্ঘ, সুস্থ ও সুন্দর।
আবির