
ছবি: জনকণ্ঠ
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা রাঙ্গামাটি, যেখানে পাহাড়-জল-আকাশ মিলে সৃষ্টি করেছে এক নৈসর্গিক পরিবেশ। সেখানেই অবস্থিত রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি)। শিক্ষা, সম্প্রীতি, প্রগতি এই তিন মূলনীতির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চব্বিশতম বছরে পদার্পণ করেছে রাবিপ্রবি।
বাংলাদেশ সরকারের আইন ২০০১ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হলেও রাবিপ্রবিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে। পথ চলার পর থেকেই ১৫ই জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে রাবিপ্রবি প্রশাসন। প্রথম দিকে শাহ্ বহুমুখী বিদ্যালয়ের ২টি শ্রেণি কক্ষ ভাড়া করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কাপ্তাই লিংক রোডের ধার ঘেঁষে ঝগড়াবিল নামক স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। ভাড়া করা মাত্র ২টি শ্রেণিকক্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন এখন ৬৪ একর। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি অনুষদের অধীনে মোট পাঁচটি বিভাগ রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৯০০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা ৫৩ জন।
শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর এক যুগেরও কম সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাঙ্গনের আলোর বাতিঘর। আর এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে প্রতি বছর ‘রাবিপ্রবি দিবস’ আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত, সংগ্রাম ও সম্ভাবনার কথা।
'রাবিপ্রবি দিবস' শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতার দিন নয়, বরং এটি এক অনুপ্রেরণার উৎস, আত্মবিশ্বাসের পুনর্জাগরণ এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনে নেওয়ার দিন। এই বিশেষ দিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সাজে বর্ণিল আয়োজনে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস, আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যালি ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা।
রাবিপ্রবি শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি পরিবর্তনের প্রতীক। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীর জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনের বৈচিত্র্যকে সম্মান জানিয়ে একত্রে পথ চলার যে চর্চা এখানে হয়, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে এখনও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসন সংকট নিরসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি এবং নতুন বিভাগ খোলার মতো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
রাবিপ্রবি শুধু বর্তমান সময়ের জন্য নয়, এটি ভবিষ্যতেরও বাহক। রাবিপ্রবি হতে পারে টেকসই কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে উদ্ভাবনী গবেষণার কেন্দ্র। তাই রাবিপ্রবি দিবস শুধুমাত্র উৎসব নয়। এটি দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দিন। আমাদের সবাইকে মিলে গড়তে হবে এক আধুনিক,অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শহীদ