
.
আমাদের মস্তিষ্কে অসংখ্য রক্তনালি জালের মতো বিস্তৃত হয়ে রক্ত সরবরাহ করে। অ্যানিউরিজম মস্তিষ্কের রক্তনালির ফোলা বেলুনের মতো অংশ। মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম হলে মস্তিষ্কের রক্তনালির ফোলা অংশ হঠাৎ ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে হেমোরজিক স্ট্রোক হয়। এ রোগ প্রাণঘাতী। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ মারা যান হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই।
মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম হলে মস্তিষ্কের রক্তনালির ফোলা অংশ হঠাৎ ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
অ্যানিউরিজমের কারণ
বংশগত, উচ্চ রক্তচাপ, মাথায় গুরুতর আঘাত, ধূমপান ইত্যাদির কারণে মস্তিষ্কে অ্যানিউরিজম হয়ে থাকে। জন্মগতভাবে থাকতে পারে কারও।
কীভাবে বুঝবেন
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যতক্ষণ মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমগুলো না ফাটে, ততক্ষণ কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তাই শনাক্ত করা সহজ নয়। তবে অন্য কোনো কারণে মস্তিষ্কের পরীক্ষা করতে গিয়ে শনাক্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমগুলো ফেটে গেলেই তার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে-
হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা।
ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।
বমি বমি ভাব।
চোখের কাছে বা পেছনে ব্যথা।
অস্পষ্ট দৃষ্টি বা দ্বিগুণ দৃষ্টি।
মুখের এক পাশ অবশ হওয়া বা অসাড়তা।
মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের ফলে সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ বা রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমন রোগীদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় তিনজনই দুই সপ্তাহের মধ্যে মারা যায়।
রোগনির্ণয়
এনজিওগ্রাম হলো অ্যানিউরিজম শনাক্ত করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। পায়ের রক্তনালির মাধ্যমে একটি ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে ঘাড়ের রক্তনালিগুলোর মাধ্যমে মস্তিষ্ক পর্যন্ত নেওয়া হয়। মস্তিষ্কের সব রক্তনালি দেখতে কনট্রাস্ট ডাই ইনজেকশন করা হয়। এই পরীক্ষা চিকিৎসককে সহজেই অ্যানিউরিজমের অবস্থান নির্ণয়ে সহায়তা করে। এ ছাড়া এই রোগ শনাক্তে এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও সিএসএফ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা
এই রক্তক্ষরণের বিপদ শুধু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। একটি পন্থা হলো রোগীর কুঁচকি দিয়ে ক্যাথিটার ঢুকিয়ে মগজের সংশ্লিষ্ট ধমনি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং ওই ক্যাথেটার দিয়েই অ্যানিউরিজমে প্লাটিনামের অতি সূ² প্যাঁচানো তার ঢোকানো হয়। ফলে ফোলা জায়গায় আর কোনো রক্ত ঢুকতে পারে না। অ্যানিউরিজমটিকে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে তার ভেতরের রক্তও আর জমাট থাকে না, বরং তরল হয়ে আসে? অন্য উপায়টি হলো সরাসরি মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার? সে জন্য সবচেয়ে কাছ দিয়ে অ্যানিউরিজম পর্যন্ত পৌঁছানো দরকার? অতি সাবধানে কাজ করতে হয়- অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অ্যানিউরিজমে টাইটানের তৈরি ক্লিপ লাগাতে হয়। চাপবাঁধা জায়গাটার ঠিক তলায় ক্লিপ বসিয়ে ফোলা জায়গায় আর যাতে রক্ত না ঢোকে, তার ব্যবস্থা করা হয়। সমস্যা নিরসনে একজন বিশেষজ্ঞ নিউরোসার্জনের পরামর্শ নিয়ে রাখা উচিত।
লেখক : অধ্যাপক নিউরোসার্জারি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ) এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট (নিউরোসার্জন) বিভাগ, ল্যাবএইড,
হটলাইন: ০১৭১১-৩৫-৪১-২০
প্যানেল