ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

গ্যাস্ট্রিক’ ভাবলেও হতে পারে ক্যান্সার:বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা

প্রকাশিত: ০১:৩০, ১৫ জুলাই ২০২৫

গ্যাস্ট্রিক’ ভাবলেও হতে পারে ক্যান্সার:বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা

একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পেটের ক্যান্সার হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) নামক সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। Nature Medicine জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রায় ১৬ মিলিয়ন মানুষ তাদের জীবনকালে পেটের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন, যার মধ্যে ১২ মিলিয়ন রোগের কারণ হবে H. pylori ব্যাকটেরিয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেটের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ অনেক সময় লক্ষণহীন থাকায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও অবিরত পেটের অস্বস্তি বা বেদনাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

প্রধান তথ্যাবলী:

এশিয়াতে প্রায় ৮ মিলিয়ন এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় প্রায় ১.৫ মিলিয়ন H. pylori সংক্রমণের কারণে পেটের ক্যান্সার হবে বলে অনুমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণ বয়সীদের মধ্যে পেটের ক্যান্সারের বৃদ্ধির পিছনে এই ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা থাকতে পারে। H. pylori ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের বিকাশ দরকার, তবে এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে জোর নেই।

H. pylori এবং এর উপসর্গ:

H. pylori ব্যাকটেরিয়া সাধারণত শিশু বয়সে পেটে সংক্রমিত হয় এবং অনেক সময় কোন উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে কখনো কখনো তা পেটের আলসার বা ক্যান্সারেও রূপ নিতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • পেটের জ্বালা বা ব্যথা

  • দ্রুত পরিপূর্ণতা বোধ

  • বমি ভাব

  • বারবার বুকে বায়ু ওঠা

  • অজানা ওজন কমে যাওয়া

এই ব্যাকটেরিয়া লালাগ্রস্ত খাদ্য, জল বা সরাসরি লালার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণত শ্বাসের পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

H. pylori সংক্রমণ সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ও প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তবে চিকিৎসা ছাড়াও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য:

সান্তা মনিকার প্রোভিডেন্স সেন্ট জনস ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের শল্যকর্ম বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টন বিলচিক বলেন, “এই গবেষণা দেখায় পেটের ক্যান্সার একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।”

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জু হা হোয়াং বলেন, “এই গবেষণা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য H. pylori পরীক্ষা ও স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।”

পেটের ক্যান্সার সম্পর্কিত তথ্য:

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৩০,০০০ নতুন পেটের ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয় এবং ১০,০০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ক্যান্সার সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং অনেক সময় তৎক্ষণাত লক্ষণ প্রকাশ পায় না।

বয়স ৬০ বছরের বেশি, ধূমপান, স্থূলতা, পারিবারিক ইতিহাস এবং অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

সতর্কতা: দীর্ঘস্থায়ী পেটে জ্বালা, খারাপ হজম, অতিরিক্ত গ্যাস বা অনিদ্রার মতো উপসর্গগুলোকে কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়। প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং H. pylori পরীক্ষা করান।

Jahan

×