ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

রাশিয়ার উপর ‘কঠোর’ শুল্কের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের, ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা!

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৫:২৫, ১৫ জুলাই ২০২৫

রাশিয়ার উপর ‘কঠোর’ শুল্কের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের, ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা!

ছ‌বি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে না আসে, তাহলে ৫০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার ওপর ‘খুব কঠোর’ শুল্ক আরোপ করা হবে। সোমবার ওয়াশিংটনে ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য ‘বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের’ সমরাস্ত্র পাঠাবে, যার মধ্যে থাকবে প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র। এই অস্ত্রগুলো মূলত ন্যাটোর কাছে পাঠানো হবে, এবং ন্যাটো তা ইউক্রেনসহ সংশ্লিষ্ট সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিতরণ করবে। ট্রাম্প বলেন, এই অস্ত্রের অর্থ ন্যাটো সদস্য দেশগুলো দেবে।

তিনি বলেন, “সংক্ষেপে বললে, আমরা সর্বাধুনিক অস্ত্র তৈরি করব এবং তা ন্যাটোকে পাঠানো হবে। যদি পুতিন ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে না আসে, তাহলে আমরা ১০০ শতাংশ হারে মাধ্যমিক শুল্ক আরোপ করব।”

প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর না করায় তিনি ক্রমাগত হতাশ হচ্ছেন বলে জানান।

যদিও রাশিয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তারা ৩০ দিনের নিরর্তক যুদ্ধবিরতির পশ্চিমা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এতে ইউক্রেন নতুন করে অস্ত্র মজুদ ও সেনা পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, “আমার কথা-বার্তা সবসময় পুতিনের সঙ্গে ভালো হয়… আমি বাসায় ফিরে গিয়ে ফার্স্ট লেডিকে বলি, আজ ভ্লাদিমিরের সঙ্গে দারুণ কথা হলো। আর তখনই তিনি বলেন, ‘আরে, আরেকটা শহর তো ক্ষেপণাস্ত্রে উড়ে গেল।’”

ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাটো প্রধান রুটে বলেন, “এই সহায়তায় ইউক্রেন প্রচুর পরিমাণে বিমান প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ পাবে। যদি আমি আজ পুতিন হতাম, তাহলে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নতুন করে ভাবতাম।”

ট্রাম্প জানান, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্যাট্রিয়ট সিস্টেমগুলো তুলে এনে সেগুলো ন্যাটো দেশগুলোকে বিক্রি করা হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেননি, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইউক্রেনকে আক্রমণাত্মক অস্ত্রও দেবে কি না।

আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া সেন্টারের বিশিষ্ট গবেষক মেলিন্ডা হ্যারিং জানান, পুতিনকে সময় দিয়েও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প এখন কঠোর অবস্থানে গেছেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন শান্তি আনতে। কিন্তু পুতিন তাকে ধোঁকা দিয়েছে বলে মনে করছেন।”

কিয়েভে ইউক্রেনীয়রা ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে শক্ত সমর্থন হিসেবে দেখলেও এখনো পুরো বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদক ররি চাল্যান্ডস বলেন, “যদি সত্যি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম আসে, তাহলে তা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষায় বড় পরিবর্তন আনবে।”

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলো অনেক আগেই ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে আসছে এবং রাশিয়া এখনো আলোচনায় আগ্রহী। তবে রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই ঘোষণায় অনেকেই হতাশ। আল জাজিরার সাংবাদিক ইউলিয়া শাপোভালোভা জানান, “অনেকে আশা করেছিলেন ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুদ্ধ শেষ হবে। এখন মনে হচ্ছে তিনি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাতে ভিডিও ভাষণে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান এবং জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়েও আলোচনা চলছে। তবে বিস্তারিত জানাতে এখনো সময় প্রয়োজন।

তিনি বলেন, “আমাদের জনগণের জীবন রক্ষায় সহায়তা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তুতির জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

সূত্র: আল জাজিরা

এম.কে.

×