
ছবি: প্রতীকী
এই যুগে মানুষ যতই শিক্ষিত বা সচেতন হোক না কেন, প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতারকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি চতুর ও কৌশলী হয়েছে। তারা আমাদের বিশ্বাস, আবেগ বা লোভের সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে। তাই প্রতারণার শিকার হওয়ার আগে আমাদের নিজেকেই সতর্ক হতে হবে। একটু সচেতন হলেই অনেক বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। এর জন্য প্রতিটি মানুষকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিজেকে আগে থেকেই জিজ্ঞেস করা উচিত। নিচে এমন চারটি প্রশ্ন তুলে ধরা হলো, যেগুলো প্রতারণার মুখে পড়ার আগে নিজেকে করলে আপনি অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারবেন।
প্রথম প্রশ্নটি হলো— “আমি কেন এতে আগ্রহী হচ্ছি?”
এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কোনো প্রস্তাবে হঠাৎ খুব আগ্রহ দেখান, তাহলে একটু থামুন এবং ভাবুন। আপনি কি সত্যিই এই বিষয়ে আগ্রহী, নাকি কাউকে খুশি করতে গিয়ে, না বলা না-পেরে বা অতিরিক্ত লাভের আশায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন? প্রতারকরা অনেক সময় এমন অফার দেয় যা অতিরিক্ত ভালো লাগে—যেমন কম দামে জমি, অল্প খরচে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ, লটারিতে জেতার মেসেজ ইত্যাদি। এই রকম কিছু পেলে ভাবুন, আপনি কেন এতে আগ্রহী হচ্ছেন? বাস্তবিক কোনো দরকার আছে? নাকি শুধু লোভে পড়ছেন? এই বিশ্লেষণ অনেক সময় প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে— “তথ্যগুলো কতটা সত্যি?”
প্রতারণার পেছনে থাকে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিশ্চিত হন যে আপনাকে যে তথ্য বা কাগজ দেখানো হচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। ইন্টারনেটে যেকোনো কোম্পানি বা ব্যক্তির নাম সার্চ করলেই অনেক সময় আগের অভিযোগ বা প্রতারণার খবর পাওয়া যায়। আপনি যে অফিসে যাচ্ছেন বা যে ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন করছেন, তার সত্যতা যাচাই করা দরকার। প্রতারকরা প্রায়ই নিজেদের সরকারি অফিসার, প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা নামকরা ব্র্যান্ডের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়। কেউ যদি পরিচয় নিয়ে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চায় বা আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলে, তাহলে সন্দেহ করুন।
তৃতীয় প্রশ্নটি হলো— “সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে চাপ দেয়া হচ্ছে কি না?”
প্রতারণার একটা বড় কৌশল হলো ‘চাপ সৃষ্টি করা’। প্রতারকরা প্রায়ই বলে, "এই সুযোগটা এখনই নিতে হবে", "আজকেই টাকা দিলে অফার পাবেন", "আর দেরি করলে অন্য কেউ পেয়ে যাবে" ইত্যাদি। তারা আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে চায়, যেন আপনি ভেবে দেখার সুযোগ না পান। যদি কেউ বারবার চাপ দেয় বা বলে যে সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে, তাহলে তা সন্দেহজনক। ভালো কোনো প্রস্তাব হলে সেটা নিয়ে ভাবার সুযোগ দেওয়া হয়। মনে রাখবেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় চাওয়া আপনার অধিকার।
চতুর্থ প্রশ্নটি হলো— “আমার ভেতরের শব্দ কী বলছে?”
অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না। আমাদের মনে একটা অস্বস্তি বা সন্দেহ তৈরি হয়। কিন্তু সেই অনুভূতিটা আমরা উপেক্ষা করি, কারণ অন্যরা বলছে, "সব ঠিক আছে", বা আমরা ভাবি, "নাহ, এত খারাপ মানুষ হবে না"। এই ভুলটাই সবচেয়ে বড় ভুল। আমাদের অন্তরের শব্দ বা 'gut feeling' অনেক সময় বাস্তবতার চেয়ে বেশি সঠিক হয়। কোনো কিছু যদি আপনার মনে শান্তি না দেয়, মনে হয় কিছু একটা গোপন আছে, তাহলে সেখানে যুক্তি বা লোভে না গিয়ে সেই অস্বস্তিকে গুরুত্ব দিন। হয়ত সেটাই আপনাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচাবে।
প্রতারণা এখন সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে— অনলাইন হোক বা অফলাইন, ব্যক্তিগত হোক বা পেশাগত। প্রতারকরা সব সময় নতুন নতুন কৌশল নিয়ে আসে। তাই একমাত্র সচেতনতা, ধৈর্য ও প্রশ্ন করার অভ্যাসই পারে আপনাকে নিরাপদ রাখতে। উপরের চারটি প্রশ্ন আপনি যদি যেকোনো প্রস্তাব বা অফারের আগে নিজেকে করেন, তাহলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
নিজেকে প্রশ্ন করুন, উত্তর খুঁজে নিন, তারপরই সিদ্ধান্ত নিন। তাড়াহুড়ো নয়, সচেতনতা হোক প্রতারণা প্রতিরোধের প্রথম হাতিয়ার।
এম.কে.