ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

জাতীয় ঐক্যের ভাঙন: নতুন পতনের পূর্বাভাস

মহি উদ্দিন জাবের

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৭:৩৭, ১৫ জুলাই ২০২৫

জাতীয় ঐক্যের ভাঙন: নতুন পতনের পূর্বাভাস

ছবি: জনকণ্ঠ

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি শাসকের পতন নয়- ছিল দীর্ঘ দমন, নিপীড়ন ও প্রতারণার বিপরীতে জনগণের একজোট হওয়ার মুহূর্ত। সেই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ যেন এক নতুন সম্ভাবনার সামনে এসে দাঁড়ায়। যেসব শক্তি দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রের প্রতিকূলতায় লড়েছিল- বিএনপি ও জামায়াত- তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

কিন্তু, বছর ঘুরতেই এই দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে উত্তেজনা ও দূরত্ব আমাদের সামনে এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলে ধরে। এটি কি নিছক মতপার্থক্য, নাকি কোনো সুচতুর প্রক্রিয়ার পরিণতি? পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, কর্মসূচি আর মাঠের বিভাজন দেখে মনে হচ্ছে- এই মুখোমুখি অবস্থান যেন কেউ-না-কেউ চায়। যেন কেউ সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের ভিত নড়াতে।

এই প্রেক্ষাপটে কোনো পক্ষকে দায়ী না করে বরং ভাবতে হবে- কে লাভবান হচ্ছে এই দ্বন্দ্বে? রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতই প্রকৃত হোক, এর পেছনে যদি অদৃশ্য কোনো পরিকল্পনা থাকে, তবে তা কেবল বিভ্রান্তি নয়- জাতীয়ভাবে আত্মঘাতীও হতে পারে।

বিএনপি ও জামায়াত এখন আর কেবল অতীতের "বিরোধী দল" নয়- তারা সম্ভাব্য নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর প্রধান স্টেকহোল্ডার। এই বাস্তবতায় বিভাজন মানে একটি জাতিগত অপচয়। যার ফলশ্রুতিতে আন্দোলনের অর্জন ছিন্নভিন্ন হয়, নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারায় মানুষ, আর রাষ্ট্রব্যবস্থার পুরনো কুশীলবেরা সুযোগ খুঁজে নেয় ফের সুবিধায় আসার।

এখনো সময় আছে। বিভ্রান্তি আর অভিমান ছাপিয়ে একটি পরিপক্ব রাজনৈতিক বোঝাপড়ার পথে ফিরতে হবে। জুলাইয়ের যে স্বপ্নে রাজপথ জেগেছিল, যে ঐক্যের বদৌলতে হাসিনার ফ্যাসিবাদ ভেঙে চুরমার হয়েছিল, তা বিভাজনের আগুনে পুড়ে যেতে দেওয়া যাবে না।

মনে রাখা প্রয়োজন, ইতিহাস মাফ করে না। যারা ঐক্যের দরজা বন্ধ করে, ভবিষ্যৎ তাদের আর স্মরণ করে না।


লেখক: মহি উদ্দিন জাবের, সিলেট 

সাব্বির

×