ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৪ জুলাই ২০২৫

ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষ স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ায় তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে ক্ষমা করা হবে বলে আদেশ দিয়েছেন।
তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত ১০ জুলাই, সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।
রাজসাক্ষী কে? আসামি কীভাবে রাজসাক্ষী হন, এর  প্রক্রিয়াই বা কী? সম্প্রতি এ সব বিষয়েই আলোচনা চলছে। একজন অপরাধী, যিনি অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন বা করতে চান। অপরাধ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ সত্য তথ্য আদালতের কাছে প্রকাশ করতে চান, অন্য অপরাধীদের অপরাধের বিবরণও তুলে ধরেন। তখন আদালত এই অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন। আইনের ভাষায় যাকে, ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী বলে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৩৩৯ ধারায় রাজসাক্ষী কে হবেন, রাজসাক্ষীকে ক্ষমা করা ও বিচার পদ্ধতির বর্ণনা রয়েছে। অন্যদিকে ‘অ্যাপ্রুভার’-এর ক্ষমাসংক্রান্ত বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় আছে।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) (এ), ৩ (২) (জি), ৩ (২) (এইচ), ৪ (১), ৪ (২), ৪ (৩) ধারায়  তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অভিযোগ গঠনের আদেশ পড়ে শোনানো হয় এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি দোষ স্বীকার করবেন? নাকি নির্দোষ দাবি করবেন। তিনি নিজের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই স্বীকার করেন এবং বলেন, আদালতে উত্থাপিত সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ ও অপরাধ সংঘটনে তিনি জড়িত। তিনি প্রধান আসামি এবং অন্য সহায়তাকারীদের সম্পর্কে তার জানা সব ঘটনা, পরিস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের পূর্ণাঙ্গ সত্য তথ্য প্রকাশ করতে চান। তিনি এই ট্রাইব্যুনালের শর্তগুলো মেনে নিয়েছেন। সুবিধাজনক সময়ে ট্রাইব্যুনাল, শর্ত সাপেক্ষে তাকে বিচারে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকবেন।
মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
যেহেতু অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সত্য প্রকাশে রাজসাক্ষী হয়েছেন। সাক্ষীর নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কারাগারে অন্য বন্দিদের থেকে পৃথক রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আদালত যদি তার সাক্ষ্যে সন্তুষ্ট হন, তাহলে চূড়ান্ত বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তাকে ক্ষমা করতে পারেন। বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে ক্ষমা করার প্রশ্ন আসবে না। দেশবাসী আশা করে  জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সুষ্ঠুবিচার, ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ প্যানেল করতে সক্ষম হবেন কোনো ধরনের বাধাবিপত্তি ছাড়াই, অচিরেই জনগণ দেখতে পাবে অপরাধীর পরিণতি।

প্যানেল

×