ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

আমেরিকার সহায়তায় নতুন জীবন পেল ভারতের পুরনো MiG-29 যুদ্ধবিমানগুলো

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ১৩ জুলাই ২০২৫

আমেরিকার সহায়তায় নতুন জীবন পেল ভারতের পুরনো MiG-29 যুদ্ধবিমানগুলো

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতের পুরনো, বহু ব্যবহৃত MiG-29 যুদ্ধবিমানগুলো আবারও আকাশে ঝলসে উঠবে — তবে এবার শুধু রুশ প্রযুক্তি নয়, সেইসঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আমেরিকান স্পর্শ। সম্প্রতি একটি বড় চুক্তির মাধ্যমে ভারতের রিলায়েন্স ডিফেন্স এবং আমেরিকার একটি প্রতিরক্ষা সংস্থা মিলিতভাবে এই যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকায়নের দায়িত্ব নিচ্ছে। চুক্তির আর্থিক মূল্য? প্রায় ২.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এ যেন এক নতুন অধ্যায় — যেখানে এক সময়কার ঠান্ডা যুদ্ধের দুই পক্ষের প্রযুক্তি আজ একসঙ্গে কাজ করছে ভারতের আকাশরক্ষা আরও জোরদার করতে।

পুরনোকে নতুন করে গড়ে তোলা
ভারতীয় বায়ুসেনার (IAF) MiG-29 যুদ্ধবিমানগুলি প্রথম আকাশে ওড়ে ১৯৮৭ সালে। সেই সময় এগুলো ছিল অত্যাধুনিক। তবে চার দশক পেরিয়ে আসার পর এই ফাইটার জেটগুলো স্বাভাবিকভাবেই পুরনো হয়ে পড়েছে। যন্ত্রাংশের অভাব, রাশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা এবং দেশের নিজস্ব জেট 'তেজস'-এর দেরি — সব মিলিয়ে ভারত পড়েছিল এক চাপের মধ্যে।

ঠিক তখনই আসে এই নতুন চুক্তি
এখন থেকে ভারতের MiG-29 ও Jaguar যুদ্ধবিমান, Apache হেলিকপ্টার, এমনকি পুরনো এল-৭০ এয়ার ডিফেন্স গানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব নেবে মার্কিন সংস্থা Coastal Mechanics। এই কাজটি হবে নাগপুরে, MIHAN নামে একটি অত্যাধুনিক MRO (Maintenance, Repair and Overhaul) হাবে।

আমেরিকান কোম্পানি, রুশ প্রযুক্তি
আমেরিকার এই সংস্থাটি একেবারেই নতুন নয়। আগে থেকেই তারা বিভিন্ন পুরনো মার্কিন যুদ্ধবিমান — যেমন F-16, A-10, F-15 — এবং হেলিকপ্টার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে এসেছে। তাদের সবচেয়ে বড় দক্ষতা হলো, যেখানে আসল নির্মাতা আর সাপোর্ট দেয় না, সেখানেও তারা নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে পুরনো সিস্টেমগুলোকে জীবন্ত রাখে।

এই অভিজ্ঞতাই এখন কাজে লাগবে ভারতের জন্য। কারণ MiG-29-এর অনেক যন্ত্রাংশ এখন রাশিয়া থেকে পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সেই অভাব পূরণ করবে এই আমেরিকান সংস্থা — কখনও নিজেদের কারিগরি দক্ষতা দিয়ে, কখনও আবার নতুন যন্ত্রাংশ তৈরি করে।

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ঝোঁক বাড়ছে কেন?
গত দুই দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। একসময় শুধু রাশিয়া থেকেই অস্ত্র আসত। কিন্তু এখন ভারতের অনেক বড় চুক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
ভারত ইতিমধ্যেই কিনেছে C-130J, C-17, Apache, Chinook, P-8I-এর মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধযান ও বিমান। এখন আরও বড় বড় যৌথ প্রকল্পও আলোচনায় — যেমন, F-414 ইঞ্জিন, MQ-9B ড্রোন, Stryker গাড়ি।

এই নতুন MRO চুক্তি তাই শুধু যুদ্ধবিমান মেরামতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা আসলে এক নতুন বার্তা — ভারত এখন চায় নিজেই হোক এই অঞ্চলের প্রতিরক্ষা রক্ষণাবেক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

ভারতের নতুন লক্ষ্য
রিলায়েন্স ডিফেন্স জানিয়েছে, তারা বায়ুসেনার নিজস্ব রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চায় না। বরং তারা একে সমর্থন করবে — নিয়মিত ওভারহল, যন্ত্রাংশ তৈরি, আর বিমানগুলোর কার্যক্ষমতা দীর্ঘায়িত করাই তাদের লক্ষ্য।

এই পুরো প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো পুরনো প্ল্যাটফর্মগুলোকে যতটা সম্ভব কার্যকর রাখার চেষ্টা — যাতে নতুন কেনার চেয়ে খরচ কম হয়, কিন্তু দক্ষতায় কোনও ঘাটতি না থাকে।

এটিই এখন ভারতের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি — “Performance-Based Logistics”, অর্থাৎ, যতক্ষণ সম্ভব পুরনো জিনিসগুলোকে মেরামত করে কার্যকর রাখা।

পুরনোর সঙ্গে নতুনের মিলনে এগিয়ে চলা
আজকের এই উদ্যোগ শুধুই একটি চুক্তি নয় — এটি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যেখানে একসময় শত্রুপক্ষের প্রযুক্তি ছিল, আজ সেগুলো একসঙ্গে কাজ করছে। এই উদাহরণ দেখায়, কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত কীভাবে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে — স্মার্ট, সাশ্রয়ী, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ভরপুর।

ভারতের প্রতিরক্ষা জগতে এই ‘পুরনোকে নতুন করে গড়ে তোলা’ শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটা এক রকম কূটনৈতিক কৌশলও — যা ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চেহারা বদলে দিতে পারে।

 

 

মারিয়া

×