ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

সুখী দম্পতিরা সপ্তাহের ব্যস্ত দিনগুলোতে ৫টি ছোট অভ্যাস মেনে চলেন, যা অধিকাংশ মানুষই অবহেলা করেন

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩৬, ১৩ জুলাই ২০২৫

সুখী দম্পতিরা সপ্তাহের ব্যস্ত দিনগুলোতে ৫টি ছোট অভ্যাস মেনে চলেন, যা অধিকাংশ মানুষই অবহেলা করেন

সারা দিনের কাজের চাপে যেন ২৪ ঘণ্টাও কখনো যথেষ্ট মনে হয় না। অফিস, যানজট আর অসংখ্য টু-ডু লিস্টের ভিড়ে, অনেক সময়ই দিনের শেষে সঙ্গীর সঙ্গে সত্যিকার সংযোগটুকু হয়ে ওঠে না। তবে ঘনিষ্ঠতা ধরে রাখতে বাড়তি সময় নয়, দরকার কেবল সচেতনতা ও নিয়মিত কিছু ছোট রুটিন।

ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও কিছু ছোট অভ্যাস দম্পতিকে মানসিকভাবে কাছাকাছি রাখে। ভালো খবর হলো, ঘনিষ্ঠতা কেবল ছুটির দিনের জন্য নয়। প্রতিদিনের অভ্যাসেও সম্পর্ক হয়ে উঠতে পারে গভীর ও অর্থবহ।

সপ্তাহের প্রতিদিন সুখী দম্পতিরা যেসব কাজ করেন, যা অন্যরা প্রায়ই অবহেলা করেন চলুন জেনে নিই সে বিষয়গুলো।

১. দিনের শুরুটা ছোট্ট একসঙ্গে কাটানো রুটিনে

সকালের সময়টা সাধারণত তাড়াহুড়ার ঘড়ির অ্যালার্ম, অফিসের চাপ আর দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার তাগিদে। ফলে একসাথে কাটানো মুহূর্ত বলতে হয়তো থাকে কেবল একসঙ্গে ঘুম থেকে ওঠা আর বিদায়ের সময়ের এক চুমু।

কিন্তু সুখী দম্পতিরা জানেন, দিনের শুরুতে মাত্র পাঁচ-দশ মিনিট একসাথে কাটানোই যথেষ্ট। হয়তো অ্যালার্মটা একটু আগে দিয়ে কিছুক্ষণ আলিঙ্গন করে শোয়া, একসাথে বিছানা গুছানো, কিংবা নীরবেই পাশাপাশি বসে কফি খাওয়া সবই হতে পারে একে অপরকে গুরুত্ব দেওয়ার ছোট কিন্তু শক্তিশালী উপায়।

কীভাবে করবেন তা নয়, বরং করবেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যেন বলে দেওয়া যায় “দিনটা যেমনই হোক, আমাদের একে অপরকে তো আছেই।”

২. সারাদিনে একে অপরের খোঁজ নেওয়া ছোট বার্তায়

বেশিরভাগ দম্পতি দিনভর একে অপরকে শুধু প্রয়োজনে ফোন করেন। কিন্তু সুখী দম্পতিরা জানেন, ছোট ছোট বার্তায় আবেগি সংযোগ ধরে রাখা যায়। একটি হাসির মিম, অফিসের ছোট ঘটনা, কিংবা “তোমাকে মনে পড়ছে” এমন একটি সরল বার্তাও হতে পারে সম্পর্কের জ্বালানি।

এসব বার্তা সময় নেয় কয়েক সেকেন্ড লাঞ্চের সময়, কফি ব্রেকে, এমনকি বাথরুম ব্রেকেও দেওয়া যায়।

এই ছোট্ট মনোযোগ হয়তো তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলোই সারা দিনের ক্লান্তির মাঝে এক ফোঁটা প্রশান্তি এনে দেয়। এবং মনে করিয়ে দেয়—ঘরে কেউ অপেক্ষায় আছেন।

৩. একান্ত সময় নিজের জন্য রাখা

অফিসের স্ট্রেস কখনো কখনো সঙ্গীর ওপরই গিয়ে পড়ে হোক তা ক্ষণিকের রূঢ় ভঙ্গিতে, কিংবা মোবাইলে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা।

তাই সুখী দম্পতিরা জানেন, সন্ধ্যার পর কিছু সময় একা একা নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া কতটা দরকারি। হোক তা একা হাঁটা, এক কাপ চা নিয়ে চুপচাপ বসা কিংবা প্রিয় টিভি শো দেখা এই ‘নিজের সময়’ মানসিক অস্থিরতা কমায়। আর তাতেই সঙ্গীর জন্য থাকা সম্ভব হয় আরও মনোযোগী ও ধৈর্যশীল হয়ে।

আলাদা হয়ে একটু সময় নেওয়াটাই মাঝে মাঝে একসঙ্গে আসার সেরা প্রস্তুতি।

৪. প্রতিদিন অন্তত একবার ‘আমরা’ সময় রাখা

রাতের রুটিন আলাদা আলাদা হয়ে গেলে সম্পর্ক ধীরে ধীরে নিঃশব্দ হয়ে যায়। একজন হয়তো বাসন মাজছেন, আরেকজন সোফায় ফোন স্ক্রল করছেন। অথচ সুখী দম্পতিরা জানেন, প্রতিদিন অন্তত একবার একসাথে কিছু করাটা কতটা জরুরি।

হোক তা একসাথে রাতের খাবার খাওয়া, পাঁচ মিনিট কোনো খেলা খেলা, কিংবা পছন্দের কুইজ শো একসাথে দেখা গুরুত্বটা সময়ের দৈর্ঘ্যে নয়, বরং একসাথে থাকা ও মনোযোগে।

শর্ত একটাই নো মোবাইল, নো কাজ, নো বাচ্চা শুধু একে অপর।

৫. দিনের শেষে একান্ত আলাপ, নীরব হলেও

দিন শেষে এই সংক্ষিপ্ত কথোপকথনগুলো সমস্যা মেটানোর জন্য নয়, বরং সম্পর্কের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য। জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে “তুমি কেমন আছো, সত্যি করে বলো?” কিংবা “আমরা কি ঠিক আছি?”
কখনো শুধু ‘ধন্যবাদ’, ‘দুঃখিত’ বা ‘আজ তোমাকে ভালো লেগেছে’ বলার জায়গাও এটি হতে পারে। দিনের ছোট কথাগুলো এই সময়েই ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়।

এটি নিশ্চিত করে, সপ্তাহের ভেতরে কোনো অনুভব জমে না থাকে, যা হঠাৎ করেই ছুটির দিনে বিস্ফোরণ ঘটায়।

সবচেয়ে বড় কথা, সম্পর্কের যত্ন নেওয়ার এমন সহজ ও কার্যকর উপায় আর হয় না।


জীবনের ব্যস্ততম সময়েও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, গভীর করে তোলা সম্ভব যদি প্রতিদিন কিছুটা সচেতনতা, সংযোগ আর সময় দেওয়া যায়। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই আসলে এক সুস্থ ও সুখী সম্পর্কের ভিত। কারণ সম্পর্কের সৌন্দর্য শুধু বিশেষ দিনেই নয়, বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট যত্নেই।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4kjxmj9d

আফরোজা

×