ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

সকালের যে বিশেষ দোয়ায় মিলবে আল্লাহর সাহায্য, নিরাপত্তা ও সফলতা

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৪ জুলাই ২০২৫

সকালের যে বিশেষ দোয়ায় মিলবে আল্লাহর সাহায্য, নিরাপত্তা ও সফলতা

ছ‌বি: প্রতীকী

প্রতিদিন সকালবেলা আল্লাহর কাছে সাহায্য ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করা মুমিনদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। দিন শুরুর এই সময়টিতে, তারা আল্লাহর রহমত, দয়া, নিরাপত্তা ও সফলতা কামনায় মুখর থাকে। বিশেষ করে সকালে একটি দোয়া রয়েছে যা মুমিনদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এই দোয়ার মাধ্যমে তারা নতুন দিনের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য, শান্তি ও সঠিক পথের দিকনির্দেশনা প্রার্থনা করে। দোয়াটি হল-

 اللَّهُمَّ إِنِّي أَصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنتَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ 

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসবাহতু উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা আরশিকা ওয়া মালায়িকাতিকা ওয়া জামীআ খলফিকা আন্নাকা আনতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসূলুকা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি সকাল শুরু করছি, আপনাকে সাক্ষী রাখছি এবং আপনার আরশের ধারকদের, আপনার ফেরেশতাদের এবং সকল সৃষ্টির সামনে সাক্ষী রাখছি যে, আপনিই সেই মহান আল্লাহ, যার কোনো শরিক নেই এবং মুহাম্মদ (স.) আপনার বান্দা ও রাসুল।’ (দোয়াটি আরবিতে চার বার পড়ুন)।

এই দোয়াটিতে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার আবেদন রয়েছে। এতে রয়েছে আমাদের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা ও শিক্ষা।

দোয়াটির শুরুতেই আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর চিরস্থায়ী ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং সব কিছুর মালিক। এটি মুসলমানদের মূল আকিদা ও বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

এরপর দোয়ায় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে আল্লাহর রাসুল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই অংশটি মুসলমানদের জন্য নবীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যম। এতে মুসলমানরা তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত হয়।

সবশেষে, দোয়াটিতে রয়েছে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা ও শান্তি প্রার্থনা। এটি কেবল একটি দোয়া নয়, বরং এটি দিন শুরু করার আগেই আল্লাহর কাছে সুরক্ষা ও সহায়তা চাওয়ার একটি উপায়। এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে একজন মুসলমান আশা করেন, তাঁর দিনটি আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তায় কাটবে।

এই দোয়াটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? 

প্রথমত, সকালে এই দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করতে পারেন। এটি তার আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগিয়ে তোলে এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে।

দ্বিতীয়ত, প্রতিদিনের জীবনে নানা রকম চ্যালেঞ্জ আসে। এই দোয়া একজন মুসলমানকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলে। এতে ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস ও স্থিরতা অর্জন করা যায়।

তৃতীয়ত, এই দোয়া একজন মুসলমানকে আত্মিকভাবে শক্তিশালী করে। এটি তাকে সৎ পথে থাকতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ রাখে।

সুতরাং, প্রতিদিন সকালবেলা এই দোয়াটি পাঠ করা একজন মুসলমানের জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সঠিক পথের দিকনির্দেশনা এনে দিতে পারে।

দোয়াটি কতটা কার্যকর?

এই দোয়াটি শুধু মুখে উচ্চারণ করাই নয়, বরং এর গভীর তাৎপর্য এবং বিশ্বাসের সাথে এটি পড়লে তার ফলাফল অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া সাহাবিদের পড়তে উৎসাহিত করেছেন, যা প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে। যেখানে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি সকালে এই দোয়া চারবার পড়বে, সে সারাদিন আল্লাহর অনুগ্রহ এবং নিরাপত্তা লাভ করবে। আর সন্ধ্যায় চার বার পড়লে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। (আবু দাউদ, আদাবুল মুফরাদ, নাসায়ি, ইবনুস সুন্নি, বিন বাজ, পৃষ্ঠা: ২৩; হিসনুল মুসলিম: ৮০)

অতএব, প্রতিদিন সকালের শুরুতে এই দোয়া পড়া মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অভ্যাস। এটি শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার একটি উপায় নয়, বরং এটি বিশ্বাস, আস্থা এবং ধৈর্যেরও প্রতীক। যারা নিয়মিত এই দোয়া পড়েন, তারা আল্লাহর সাহায্য, দয়া ও সুরক্ষা লাভ করতে পারেন। দিন শুরু করার আগে এই দোয়া পাঠ করলে, একজন মুসলমান তার জীবনে শান্তি, সফলতা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভের আশা করতে পারে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতিদিন এই দোয়াটি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

এম.কে.

×