ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

তিনি এমন একজন সাহাবী ছিলেন, যাকে দেখে ফেরেশতারাও লজ্জা পেতেন

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১৪ জুলাই ২০২৫

তিনি এমন একজন সাহাবী ছিলেন, যাকে দেখে ফেরেশতারাও লজ্জা পেতেন

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে এমন একজন মহান সাহাবী ছিলেন, যাঁর চরিত্র ও লজ্জাশীলতা এতটাই উদাহরণযোগ্য ছিল যে, নিষ্পাপ ফেরেশতারাও তাঁকে দেখে লজ্জা পেতেন। ভাবতেন—মানুষ হয়েও কিভাবে কেউ এতটাই সুন্দর চরিত্রের ও এতটা লজ্জাশীল হতে পারে? তিনি হলেন হজরত উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)।


মহান আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের যে গুণাবলী দান করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো লজ্জা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজরত উসমান (রা.) সম্পর্কে বলেন:
“আমি কি সেই ব্যক্তিকে লজ্জা দিবো, যাকে দেখে ফেরেশতারাও লজ্জা পায়?”

এই হাদীসের ঘটনা বর্ণনা করেছেন উম্মুল মু’মিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)। তিনি বলেন, একবার রাসূল (সা.) আমার ঘরে শুয়ে ছিলেন। তাঁর উরু বা পায়ের পাতা খোলা ছিল। এসময় আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) এলেন—তাদের সঙ্গে তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বললেন। কিন্তু উসমান (রা.) এলে তিনি উঠে বসলেন, জামা ঠিক করলেন। আয়েশা (রা.) বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “আমি কি এমন লোককে লজ্জা দিব, যাকে দেখে ফেরেশতাও লজ্জা পায়?”

হজরত উসমান (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, চুপচাপ ও লাজুক স্বভাবের। তিনি ছিলেন একজন ধনী ব্যবসায়ী। কিন্তু তার এই সম্পদ কেবল নিজের জন্য ছিল না—গরিব-দুঃখীদের কল্যাণে তা অকাতরে ব্যয় করতেন। এ কারণে তিনি “গণী” উপাধি পান।

তিনি একবার মদিনায় পানি সংকটের সময় “রুমা কূপ” কিনে তা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এই মহান দানশীলতার কারণে রাসূল (সা.) তাকে "জান্নাতের অধিকারী" বলে ঘোষণা দেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত উসমান (রা.) দুইবার জান্নাত কিনেছেন—একবার কূপ খননের মাধ্যমে এবং একবার সেনা সাহায্যের মাধ্যমে।


রাসূল (সা.) এর দু'জন কন্যা ফাতিমার (রা.) ব্যতীত, হজরত উসমান (রা.)-ই একমাত্র সাহাবী যিনি নবীজির দুই কন্যাকে বিয়ে করেন। এ কারণে তিনি ‘জিন্নুরাইন’ বা ‘দুই নূরের অধিকারী’ হিসেবে পরিচিত হন।

ইবনে আসাকির বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত উসমান (রা.)-এর গঠন ছিল মাঝারি, চেহারার রঙ ছিল সাদা-লালচে মিশ্রণ, চেহারায় ছিল বসন্তের দাগ, এবং তিনি ছিলেন বাবরি চুলের অধিকারী।


উসমান (রা.) ছিলেন এতটাই লজ্জাশীল যে, নিজের ঘরেও সর্বদা দরজা বন্ধ রাখতেন। এমনকি একান্ত সময়ে, গোসলের সময়ও তিনি কাপড় পুরোপুরি খোলেন না। এই অতি সংযম, পরহেজগারি এবং লজ্জাশীলতাই তাঁকে ফিরিশতাদের মর্যাদার সমতুল্য করেছে।

তিনি হাদীস বর্ণনা করতেন অত্যন্ত সতর্কতা ও যত্নসহকারে। তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি বাণী যেন ভুল না হয়, সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ সচেতন।

 

শেখ ফরিদ 

×