ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

কবরের শাস্তি সত্য কিন্তু আমরা শুনতে পাই না, হাদিস ও বিজ্ঞান যা বলছে

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৭:০৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

কবরের শাস্তি সত্য কিন্তু আমরা শুনতে পাই না, হাদিস ও বিজ্ঞান যা বলছে

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ মারা গেলে তাকে কবর দেওয়া হয়। কবর জীবনের সময়সীমা শুরু হয় মৃত্যু থেকে, আর তা চলতে থাকে কেয়ামতের দিন পুনরুত্থান পর্যন্ত। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই দীর্ঘ সময় কেউ কবরকে পাবে জান্নাতের একটি টুকরো হিসেবে, আবার কেউ পাবে জাহান্নামের শাস্তি স্বরূপ একটি গর্ত হিসেবে। একজন মৃত ব্যক্তি কবরেই পেতে থাকে আল্লাহর রহমত বা শাস্তি—যা কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

ইসলামে কবরের শাস্তিকে সত্য বলে গণ্য করা হয়। পবিত্র কোরআন এবং সহিহ হাদীসে এর পক্ষে রয়েছে বহু দলিল। তবে অনেক অবিশ্বাসী ব্যক্তি প্রশ্ন তোলেন—"যদি সত্যিই কবরে শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে আমরা মৃতের চিৎকার শুনতে পাই না কেন?" কিংবা, "যে ব্যক্তি মারা গেছে, সে শাস্তি কীভাবে অনুভব করে?"

এই প্রশ্নগুলোর জবাব ইসলামিক ব্যাখ্যার পাশাপাশি বিজ্ঞান দিয়েও খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন আলেমগণ ও গবেষকরা।

কবরের আজাব সম্পর্কে কোরআন ও হাদীসের বর্ণনা
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:

“আমি মুনাফিকদের দু’বার শাস্তি দেব, অতঃপর পরকালেও তারা মহাশাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা তাওবা, ৯:১০১)

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন: “কবর জান্নাতের বাগান অথবা জাহান্নামের গর্ত।”

হাদীসে আরও এসেছে—দুই কানের মধ্যবর্তী স্থানে লোহার মুগুর দিয়ে কাফেরদের আঘাত করা হবে। এতে তারা বিকট চিৎকার করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—মানুষ কেন সেই চিৎকার শুনতে পায় না?

রাসূল (সাঃ) বলেন, এই উম্মতের মানুষ যেন দাফনে ভীত না হয়ে পড়ে, সে কারণে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করিনি যাতে তিনি তাদের কবরের শাস্তির আওয়াজ শুনিয়ে দেন, যেমনটা আমি শুনি।

কে শুনতে পায় সেই চিৎকার?
হাদীস থেকে জানা যায়, মানুষ ও জিন ছাড়া অনেক প্রাণী কবরের আজাবের আওয়াজ শুনতে পায়। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন—"তাহলে কবরস্থানে পাখি বা অন্যান্য প্রাণী আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যায় না কেন?"

উত্তর হচ্ছে—হাদীসে শুধু বলা হয়েছে, তারা কবরের আজাব বুঝতে পারে। কিন্তু কতটুকু বুঝতে পারে, সেটা স্পষ্ট নয়। হতে পারে, সব জায়গায় তারা বোঝে না, বা আংশিক বোঝে।

একবার রাসূল (সাঃ) খচ্চরের পিঠে চড়ে এমন কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেগুলোর অধিবাসীরা শাস্তি পাচ্ছিল। তখন খচ্চরটি আতঙ্কিত হয়ে এমনভাবে লাফাতে থাকে যে, তিনি তার উপর থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হন।

আজাব না শুনতে পাওয়ার কারণ
মানুষ যদি কবরের চিৎকার শুনে ফেলত, তাহলে কেউ আর দুনিয়ায় খারাপ কাজ করত না। সবাই ঈমানদার হয়ে যেত, কেউ অমুসলিম থাকত না। তাই আল্লাহ চান না দেখে বা শুনে ঈমান আনুক—তিনি চান, মানুষ অদেখা বিষয় বিশ্বাস করুক, সেটাই প্রকৃত ঈমান।

সেজন্যই কবরের আজাবের আওয়াজ মানুষ ও জিন শ্রবণ করতে পারে না। পক্ষান্তরে, পশুপাখিরা এসব শব্দ শুনতে পারে, কারণ তাদের এই পরীক্ষার মধ্যে রাখা হয়নি।

মৃত ব্যক্তি কীভাবে অনুভব করে শাস্তি?
এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞান জানায়, সাউন্ড ওয়েভ হলো দৈহিক তরঙ্গ, যা বাতাস বা অন্য কোনো মাধ্যমে চলতে পারে। এটি বাতাসে কণিকায় কম্পন ঘটায়, যার ফলে আমরা শব্দ শুনতে পাই।

গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যু পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কে কিছু স্নায়বিক ক্রিয়া সীমিত সময় ধরে চালু থাকে। বিশেষ করে মৃত্যুর আগে বা পরে গুরুতর আঘাত পেলে, মস্তিষ্ক কিছু সংকেত পাঠাতে পারে।

এটি নির্দেশ করে, মৃত্যু ও জীবনের মাঝে একটি সংযোগ বা অবশিষ্ট শক্তি থেকে যেতে পারে—যার মাধ্যমে কবরজীবনে পুরস্কার বা শাস্তি উপলব্ধি করা সম্ভব হয়।

কবরের আজাব দেখা বা শোনা যায় না কেন?
আসলে, আখিরাত বা পরকাল সম্পূর্ণ এক ভিন্নতর বাস্তবতা। কবরের আজাব দেখতে হলে যেরকম দৃষ্টিশক্তি দরকার, কিংবা শুনতে হলে যেরকম শ্রবণ শক্তি দরকার—তা সাধারণ মানুষের নেই। তবে আল্লাহ তাআলা যাকে দেখাতে বা শুনাতে চান, তিনি তা পারেন।

সুতরাং, যারা আল্লাহর সীমাহীন কুদরতের উপর ঈমান রাখেন, তারা এসব সত্য বিশ্বাস করেন। আর যারা অস্বীকার করেন, তারা সেই ঈমানের পরীক্ষায় ফেল করছেন।

শেখ ফরিদ

×