ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

সকাল ৬টা বনাম সকাল ৯টা— কোন সময়টা আপনার জীবনের জন্য বেশি কার্যকর?

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৪ জুলাই ২০২৫

সকাল ৬টা বনাম সকাল ৯টা— কোন সময়টা আপনার জীবনের জন্য বেশি কার্যকর?

ছ‌বি: প্রতীকী

আমাদের জীবনের গতি ও সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে দিনের শুরুটা কেমন হয় তার ওপর। কেউ খুব ভোরে উঠে দিন শুরু করেন, আবার কেউ একটু দেরিতে, যেমন সকাল ৯টার দিকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সকাল ৬টা নাকি সকাল ৯টা— কোন সময়টা আমাদের জীবনের জন্য বেশি কার্যকর?

সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস মানে হলো, আপনি দিনের শুরুতেই সময়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছেন। এ সময়টা চারপাশ অনেক শান্ত থাকে। পাখির ডাক, ঠাণ্ডা বাতাস, আর ভোরের আলো মিলে তৈরি করে এক ধরনের প্রশান্তি। যারা এ সময় ঘুম থেকে ওঠেন, তারা সাধারণত শরীরচর্চা, নামাজ বা ধ্যান, বই পড়া কিংবা নিজের পরিকল্পনা সাজানোর মতো কাজগুলো করে নিতে পারেন। এ সময় মনোযোগ বাড়ে, মন শান্ত থাকে এবং কোনো ধরনের ব্যস্ততা বা তাড়াহুড়ার মধ্যে পড়তে হয় না। ফলে যারা ভোরে ওঠে তারা মানসিকভাবে বেশি শক্তিশালী এবং আত্মনিয়ন্ত্রিত হন।

অন্যদিকে, যারা সকাল ৯টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের জন্য দিনটা অনেকটাই দেরিতে শুরু হয়। অনেক অফিস বা কাজ সকাল ৯টার মধ্যেই শুরু হয়ে যায়, তাই তখন উঠে দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে দৌড়ে অফিস বা ক্লাসে যেতে হয়। এতে করে দিনের শুরুতেই একটা চাপ তৈরি হয়। ঠিক মতো খাওয়া হয় না, শরীরচর্চা হয় না, নিজের সময় বলে কিছু থাকে না। যে সময়টায় ভোরের মানুষজন অনেক কাজ সেরে ফেলেন, সেখানে ৯টায় ওঠা মানুষ তখনো ঘুমচোখে দাঁড়িয়ে। ফলে তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েন সময় ব্যবস্থাপনায়।

এ ছাড়া বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বলছে, ভোরে ওঠা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেশি থাকে। সকালে বাতাসে অক্সিজেন বেশি থাকে, যা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। নিয়মিত সকালে ওঠা মানুষের ঘুমের গুণমান ভালো হয়, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং তারা বেশি ফোকাসড থাকেন। তারা দিনের সময়টা কাজে লাগাতে পারেন বেশি সময় ধরে, ফলে প্রোডাক্টিভ হন।

অন্যদিকে, যারা রাত জেগে সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের শরীরের ঘড়ি বা বডি ক্লক বিঘ্নিত হয়। ফলে ঘুমজনিত সমস্যা, মনঃসংযোগের অভাব, বিষণ্নতা কিংবা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। আর ঘুম থেকে উঠেই যদি কাজের চাপ নিতে হয়, তাহলে সারা দিনটাই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে এটা ঠিক, সবার জীবনের ছন্দ একরকম নয়। কিছু পেশা বা কিছু মানুষের ব্যক্তিত্ব এমন যে, তারা রাতের দিকে বেশি কাজ করতে পারেন এবং সকাল দেরিতে ওঠা তাদের জন্য কার্যকর হয়। কিন্তু সংখ্যাগত দিক দিয়ে দেখা যায়, সফল ব্যক্তিদের বড় অংশই খুব ভোরে ওঠেন। অ্যাপল, টেসলা, ডিজনি কিংবা মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের অনেক সিইও বা উদ্যোক্তা সকাল ৫টা বা ৬টায় ঘুম থেকে ওঠেন। কারণ, তারা জানেন যে এই সময়টা শুধু নিজের জন্য কাজে লাগানো যায়।

সবশেষে বলা যায়, সকাল ৬টা মানে শুধু একটা সময় নয়, এটা জীবনের একটি শৃঙ্খলা। এই সময় উঠে আপনি যেমন নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারেন, তেমনি মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারেন দিনের নানা চ্যালেঞ্জের জন্য। সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে আপনি সেই সম্ভাবনাটাই হারিয়ে ফেলেন। তাই যদি জীবনে সফল, স্বাস্থ্যবান এবং শান্ত থাকতে চান, তাহলে সকাল ৬টা হোক আপনার দিনের সূচনা। কিছুদিন চেষ্টা করলে দেখবেন, আপনি যেমন সময়ের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন না এতদিন, এখন সময়ই আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে।

এম.কে.

×