
ছবি: সংগ্রহীত।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি নীরব ঘাতক, যা প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো লক্ষণ না দেখালেও শরীরের ভিতরে নীরবে ক্ষতি করে যেতে পারে। এর ফলে হৃদ্রোগ, স্ট্রোকসহ নানা মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। সকালে মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি ও অকারণে ক্লান্তি— এসব সূক্ষ্ম উপসর্গ উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে বহু মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এর বিপজ্জনক দিক হলো—এটি অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরের ক্ষতি করতে থাকে। অনেকে বছরের পর বছর জেনে উঠতে পারেন না যে তাঁদের রক্তচাপ বেড়ে গেছে।
যখন রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায়, তখন কিছু তীব্র লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন—তীব্র মাথাব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট, বুক ধড়ফড়, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা বুক-গলা-কানে ধপধপ শব্দ অনুভব হওয়া। মাথা ঘোরা, নাক থেকে রক্ত পড়া বা দৃষ্টির পরিবর্তনের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। তবে এসব লক্ষণ সাধারণত হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিসের মতো সংকটময় অবস্থায় দেখা দেয়।
তাই যতক্ষণ না তীব্র উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, ততক্ষণ রক্তচাপ নিয়মিত না মাপলে সেটি বুঝে ওঠা কঠিন। অনেকেই শুধুমাত্র স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো বড় জটিলতা দেখা দেওয়ার পরই জানতে পারেন যে তাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তাই শুধুমাত্র বড় লক্ষণের দিকে নয়, বরং ক্ষীণ উপসর্গগুলোর দিকেও সচেতন দৃষ্টি রাখা দরকার।
নিচে উচ্চ রক্তচাপের এমন ৩টি সূক্ষ্ম লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো সচরাচর নজর এড়িয়ে যায়, কিন্তু প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে গুরুত্ব রাখে—
১. সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা:
সকালে উঠে মাথাব্যথা হওয়া অনেক সময় স্ট্রেস বা ঘুমের অভাব বলে মনে করা হয়। কিন্তু এটি উচ্চ রক্তচাপের একটি সূক্ষ্ম লক্ষণ হতে পারে।
এই ব্যথাগুলো সাধারণত মাথার পেছনে বাষ্প চাপ বা থমথমে ধরনের হয়।
রাতে ঘুমের সময় বা ভোরে রক্তচাপ বেড়ে গেলে মাথার খুলিতে চাপ পড়ে, যার ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা অনুভূত হয়।
যদি নিয়মিত এমন মাথাব্যথা হয়, তবে রক্তচাপ মাপিয়ে দেখা উচিত।
২. ঝাপসা বা অস্থির দৃষ্টি:
দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তনও একটি অল্প বোঝা যায় এমন উপসর্গ, যা প্রায়ই চোখ এড়িয়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ চোখের ছোট রক্তনালিগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি নামক এক অবস্থার সৃষ্টি করে।
এর ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে, ডাবল ভিশন বা হঠাৎ কিছু সময়ের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া ঘটতে পারে।
অনেকেই এসব পরিবর্তনের কারণ হিসেবে মোবাইল-কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশি সময় দেখা বা বার্ধক্যকে দায়ী করেন। তবে যদি এসব পরিবর্তনের কোনো স্পষ্ট কারণ না থাকে, তবে রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত।
৩. অকারণ ক্লান্তি বা মনোযোগের ঘাটতি:
ক্লান্তি বা মনোযোগের অভাবকে সাধারণত গুরুতর কিছু মনে করা হয় না। তবে এটি এমন একটি উপসর্গ, যা জানাতে পারে—মস্তিষ্ক ও হৃদ্যন্ত্রে যথেষ্ট অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছাচ্ছে না। এর ফলে ধীরে ধীরে মানসিক তীক্ষ্ণতা ও দৈহিক শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। অনেকেই বলেন, ভালো ঘুমের পরও অস্বাভাবিক ক্লান্ত লাগে বা মন বসে না—এমন উপসর্গ হলে রক্তচাপ মাপানো জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ সাধারণত খুব হালকা ও অস্পষ্ট হয়ে থাকে, যা সহজেই উপেক্ষিত হয়। তাই যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি আছে, তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। মাথাব্যথা, দৃষ্টির পরিবর্তন বা ক্লান্তির মতো ক্ষীণ লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নজর দিলে হাইপারটেনশনকে আগেই শনাক্ত করা সম্ভব—যার মাধ্যমে বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো যেতে পারে।
মিরাজ খান