
সংগৃহীত প্রতীকী ছবি
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী হাট-বাজার। একসময় গ্রামীণ অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক মিলনমেলার প্রাণকেন্দ্র ছিল এসব হাট। কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। ছোট ছোট বাজার, দোকান আর পাইকারি কেনাবেচার প্রবণতায় হারিয়ে যাচ্ছে হাটের সেই জৌলুস।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী হাট-বাজার—বায়রা হাট, ঝিটকা হাট, দৌলতপুর হাট, ঘিওর হাট, মানিকগঞ্জ হাট ও শান্তিরহাট এক সময় দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষের পদচারণায় মুখর থাকত। পাশাপাশি নতুন বাজার হিসেবে টাউন বাজার, হিজুলি বাজার, সিঙ্গের বাজারও পরিচিতি পেয়েছিল। তবে বর্তমানে এসব বাজারে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, আগে নির্দিষ্ট দিনে সপ্তাহে দুবার হাট বসত। মানুষ অনেক দূর থেকে এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনত, বিক্রি করত। হাট ছিল উৎসবমুখর মিলনমেলা। এখন প্রতিদিনই বাজার বসে, ফলে নির্দিষ্ট হাটবারের গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
ঝিটকা হাটের দোকানি আবদুল করিম বলেন, ‘আগে হাটে হাজার হাজার মানুষ আসত। পাইকাররা পণ্য কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেত। এখন সেসব অতীত। হাট এখন প্রতিদিনই বসে, কিন্তু ভিড় নেই।’
ঘিওর এলাকার ৭৫ বছর বয়সী নঈম উদ্দিন জানান, শতবর্ষী কাটিগ্রাম হাটে এক সময় নৌপথে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য আসত। বাজারের দিনে প্রবাসীরাও গ্রামে ফিরে এসে পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করত। ‘এখন আর সেই আগ্রহ নেই, হাটবার কেবল ক্যালেন্ডারে লেখা একদিন মাত্র,’ বলেন তিনি।
বায়রা হাটের এক প্রবীণ জেলে বলেন, ‘গ্রামীণ হাট শুধু বাজার নয়, এটি সংস্কৃতির অংশ। এখনকার প্রজন্ম জানেই না এসব হাটের ইতিহাস। আগে শনিবার আর মঙ্গলবার হলে এই হাটে মানুষের ঢল নামত। এখন আর নির্দিষ্ট বাজারদিনের প্রয়োজন হয় না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণ হাটের এই পতনে কৃষি অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে। কৃষকরা বাজারে গিয়ে পণ্যের দাম যাচাই করতে পারছেন না, বরং পাইকাররাই মাঠ থেকে কম দামে পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
তাঁদের মতে, এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হাট ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে একসময়ের গর্ব হয়ে উঠবে শুধুই স্মৃতি।
সাব্বির