
ফরিদপুরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা ও আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ইয়াবা, অসংখ্য মোবাইল ও সিমকার্ড।
চক্রটি বিকাশ, নগদসহ মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের কাছ থেকে ফোনে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিত এবং সেই অর্থের বড় অংশ অনলাইন জুয়ায় খাটিয়ে বিদেশে পাচার করত।
১৫ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে চক্রের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রযুক্তিগত কৌশল এবং আর্থিক লেনদেন পদ্ধতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়।
চক্রটি বিভিন্ন জুয়ার সাইটে সফটওয়্যার ব্যবহার করে ‘নির্ভুল জয়’ নিশ্চিত করে অর্থ জোগাড় করত এবং পরে সেই অর্থ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশি অ্যাকাউন্টে পাচার করত।
গত ১৪ জুলাই ভোরে মধুখালীর ডোমাইন ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় চক্রের মূলহোতা কামরুল মিয়া (৪০) ও তার সহযোগী অমরেশ বিশ্বাস (৩০), সোহান মালিক (২৪), হাফিজুর রহমান (৪২) ও শেখ শাকিল আহমেদ (২৬) কে।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০৬ পিস ইয়াবা, ৪২টি গ্রামীণফোন সিমকার্ড ও ১০টি মোবাইল ফোন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে, তারা বিকাশের ভুয়া কাস্টমার কেয়ার সেজে গ্রাহকদের পিন ও ওটিপি জেনে টাকা হাতিয়ে নিত। পরে সেই অর্থের ৫০% জুয়ার মাধ্যমে বিদেশে পাচার এবং বাকি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত।
তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় অবৈধ সিম সরবরাহকারী গ্রুপের মাধ্যমে ভুয়া মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু রাখত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রটির কার্যক্রম ফরিদপুর ছাড়িয়ে রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগেও বিস্তৃত ছিল। এটি দেশের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ঘিরে গড়ে ওঠা এক ভয়ংকর ডিজিটাল প্রতারণা চক্রের দৃষ্টান্ত।
আটককৃতদের মধুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সাইবার অপরাধ দমন আইন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এই অভিযানে দেশের একটি সুসংগঠিত প্রতারণা ও পাচার চক্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
নুসরাত