
ছবি: সংগৃহীত
জলবায়ু পরিবর্তন কেবল পরিবেশের ওপর নয়, আমাদের স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিবর্তন সরাসরি রক্তচাপের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলো আপনার রক্তচাপের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং এর থেকে সুরক্ষিত থাকতে কী করণীয়, তা জেনে নিন।
১. গরম আবহাওয়ার প্রভাব
গরম আবহাওয়ায় রক্তনালী প্রসারিত হয়, যার ফলে রক্তচাপ কমে যায়। এই সময়ে অত্যধিক ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে। এর লক্ষণ হিসেবে মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
সমাধান:
-
দিনে ৩-৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
-
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন।
-
শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে নারকেলের পানি বা ওআরএস (ORS) গ্রহণ করুন।
২. শীতকালীন সমস্যা
ঠান্ডা আবহাওয়ায় রক্তনালী সংকুচিত হয়, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এটি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
সমাধান:
-
শরীরে পর্যাপ্ত উষ্ণতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরুন।
-
বাড়ির ভিতরে হালকা ব্যায়াম করুন, যা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
-
অতিরিক্ত গরম পানির স্নান এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি রক্তচাপের আকস্মিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. আর্দ্রতার প্রভাব
অত্যধিক আর্দ্রতায় শরীরের জন্য নিজেকে ঠান্ডা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যা হিট স্ট্রোক ও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
সমাধান:
-
শরীরকে ঠান্ডা রাখতে ঢিলেঢালা ও সুতির কাপড় পরুন।
-
দিনের বেলায় এয়ার কন্ডিশনড রুমে থাকুন।
-
শরীরের পানিশূন্যতা রোধে ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
৪. আকস্মিক আবহাওয়া পরিবর্তন
আকস্মিক আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে। এর ফলে মাইগ্রেন ও জয়েন্ট পেইন দেখা দিতে পারে।
সমাধান:
-
আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত অনুসরণ করুন এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।
-
নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন।
-
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. উচ্চ উচ্চতায় ভ্রমণ
উচ্চ উচ্চতায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হতে পারে।
সমাধান:
-
ধীরে ধীরে উচ্চতা বাড়ান যাতে শরীর মানিয়ে নিতে পারে।
-
প্রয়োজনে অক্সিজেন সিলিন্ডার সাথে রাখুন।
-
অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও সতর্কতা:
কার্ডিওলজিস্ট ডা. রঞ্জন শর্মা পরামর্শ দেন, "আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সপ্তাহে ২-৩ বার রক্তচাপ মাপুন। ১২০/৮০ mmHg এর বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।"
সতর্কতা:
-
হঠাৎ রক্তচাপ কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে লবণ-চিনির পানি পান করুন।
-
রক্তচাপ বেড়ে গেলে সাময়িক উপশমের জন্য জিহ্বার নিচে সরিষার তেল দিতে পারেন (তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়)।
-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করা অপরিহার্য।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
সাব্বির