
ছবি: প্রতীকী
সকালের সময়টাই হলো পুরো দিনের ভিত্তি। যেভাবে কেউ তার সকাল শুরু করে, অনেক সময় সেভাবেই কাটে তার পুরো দিন। তাই সকালে কিছু ভাল অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় এমন তিনটি সকালের অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলো ধীরে ধীরে জীবন বদলে দিতে পারে।
প্রথম অভ্যাসটি হলো ভোরে ওঠা। অনেকেই সকাল ৮টা বা তার পরে ঘুম থেকে ওঠেন। কিন্তু যারা একটু আগে, অর্থাৎ ফজরের সময় বা তারও আগে ঘুম থেকে ওঠেন, তারা দিনের শুরুতেই একটি বাড়তি সময় পান। এই সময়টা খুব শান্ত ও নিরিবিলি থাকে। কেউই তখন ফোনে বিরক্ত করে না, চারপাশে শব্দ কম থাকে, মন শান্ত থাকে। এই সময়কে কাজে লাগিয়ে কেউ নামাজ, মেডিটেশন, বই পড়া বা নিজের কোনো সৃজনশীল কাজে সময় দিতে পারেন। এছাড়া সকালের ঠান্ডা বাতাস ও সূর্যোদয়ের সময়ের আলো আমাদের মস্তিষ্ককে সতেজ করে তোলে, যা সারা দিন ভালো মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানও বলে, সকালে ওঠার অভ্যাস যারা তৈরি করে, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, সময়জ্ঞান ও জীবনে সফল হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
দ্বিতীয় অভ্যাসটি হলো শরীরচর্চা বা হালকা এক্সারসাইজ করা। সকালে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় বের করে হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা স্ট্রেচিং করলে শরীর চাঙ্গা হয়ে যায়। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাদের রক্তসঞ্চালন ভালো থাকে, হজমশক্তি বাড়ে এবং ঘুমও ভালো হয়। শুধু তাই নয়, শরীরচর্চার ফলে মস্তিষ্কে ‘এন্ডরফিন’ নামে একটি হরমোন নিঃসৃত হয়, যেটি আমাদের মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমায়। সকালের এই অভ্যাস যদি কেউ নিয়মিত গড়ে তোলে, তাহলে ধীরে ধীরে সে আরও ফিট, কর্মঠ ও প্রফুল্ল হয়ে উঠবে। আর ভালো শরীর মানেই ভালো মন, আর ভালো মন মানেই জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন।
তৃতীয় অভ্যাসটি হলো নিজেকে প্রস্তুত করে নেওয়া ও দিনের পরিকল্পনা করে নেওয়া। অনেকেই দিন শুরু করেন কোন কাজটা আগে করবেন বুঝে না পেয়ে, অগোছালোভাবে। এতে সময় নষ্ট হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ পড়ে যায়। কিন্তু যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে ৫–১০ মিনিট সময় নিয়ে চিন্তা করা যায়, আজকে কী কী কাজ আছে, কোনটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে করা যাবে—তাহলে পুরো দিনটা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়। কেউ চাইলে লিখেও রাখতে পারেন দিনের টু-ডু লিস্ট। এতে মনেও থাকে এবং কাজ শেষ করার পর একটা ছোট অর্জনের অনুভূতিও পাওয়া যায়। এই অভ্যাসটি আমাদের জীবনকে গোছানো করে তোলে, সময়ের সঠিক ব্যবহার শেখায় এবং অকারণ দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়।
এই তিনটি অভ্যাস ভোরে ওঠা, শরীরচর্চা করা ও দিনের পরিকল্পনা করে নেওয়া প্রথম দিকে একটু কঠিন লাগতে পারে। কিন্তু নিয়মিত করলে এগুলো জীবনের অংশ হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে দেখা যাবে, মনোযোগ বাড়ছে, শরীর ভালো লাগছে, কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে এবং জীবনের প্রতি এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসছে। আমরা সবাই চাই সফল হতে, ভালোভাবে বাঁচতে। আর সফল হওয়ার জন্য যে জিনিসটা সবচেয়ে দরকার, সেটা হলো প্রতিদিনের অভ্যাস। কেউ যদি নিজের সকালটাকে বদলে ফেলতে পারেন, তাহলে ধীরে ধীরে পুরো জীবনটাই বদলে যাবে— এই সত্যিটা যারা বুঝেছে, তারাই এগিয়ে গেছে জীবনে।
এম.কে.