
ছবি: জনকণ্ঠ
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চরগংগা আবাসন প্রকল্প বর্তমানে এক বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারানো হতদরিদ্র মানুষের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নির্মিত এই আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই, বরং পরিণত হয়েছে ঝোপঝাড়ে ঢাকা একটি পরিত্যক্ত স্থানে। প্রকল্পের ছাউনির টিন ও রড উধাও হয়ে গেছে, দাঁড়িয়ে আছে কেবল খুঁটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলোর টিন, চাল এবং বেড়া সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেছে। কেবল খুঁটি আর চালের মাচান অবশিষ্ট রয়েছে। তদারকির অভাবে এবং জীর্ণদশার কারণে এসব ঘরে আশ্রিত পরিবারগুলো অন্যত্র চলে গেছে। অনেকেই এখন পাশের বেড়িবাঁধের ঢালে বা খাস জমিতে ঝুঁকিপূর্ণ ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটাচ্ছেন, ফলে আশ্রয়হারা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পুনর্বাসনের জন্য নির্মিত এই ঘরগুলো বর্তমানে ঝোপঝাড়ে ঢেকে আছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের আঁধারে কিছু লোক এই প্রকল্পের জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এবং নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে। মোসা. জায়েদা বেগম ও মোসা. হালিমা বেগম নামের দুই বাসিন্দা জানান, তারা আবাসনের টিন দিয়ে তাদের বাড়ির বেড়া দিচ্ছেন এবং বলেন, "সবাই নিয়েছে তাই আমরাও নিয়েছি, দরকার হলে আমরা ফেরত দিব।" এমন অনেকেই আবাসন প্রকল্পের টিন নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার ছিন্নমূল মানুষকে আবাসন করে দিলেও, সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তদারকির অভাবে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে দুটি বিশাল পুকুর এবং একটি কমিউনিটি সেন্টার ছিল, যেখানে আবাসনে বসবাসকারী শিশুরা লেখাপড়া করার সুযোগ পেত। তবে বর্তমানে কমিউনিটি সেন্টারের কোনো ছাউনি নেই, এবং সেখানে কোনো লেখাপড়ার কার্যক্রমও নেই। পুকুরগুলোতে মাছ থাকার কথা থাকলেও, তদারকির অভাবে সেগুলো মারা যাচ্ছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা থাকলেও, সবকিছুরই বেহাল দশা।
স্থানীয় মিজানুর রহমান ও হাফিজুল ফরাজী বলেন, "এখন আবাসন প্রকল্পটি নামে মাত্র। দেখলে বোঝা যাবে না এখানে আবাসন প্রকল্প ছিল। টিন, লোহা রাতের আঁধারে মানুষ নিয়ে গেছে। আমরা কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করছি।"
আবাসন প্রকল্পের সভাপতি মো. বজলুর রহমান বলেন, "আবাসন প্রকল্পটি বর্তমানে নেই বললেই চলে। তবে আবাসনের টিন সরকারিভাবে যারা নতুন ঘর একই স্থানে পেয়েছে, তারা নিয়ে পাকা ঘর তৈরি করেছে। আর বাইরের লোকজন কে কী নিয়েছে তা আমি জানি না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব দাস পুরকায়স্থ বলেন, "এ বিষয়ে আমি অবহিত হয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এই ঘটনা সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও তদারকির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় অসহায় মানুষগুলো আবারও চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সাব্বির