ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

গাজায় খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়ানো ৩৪ জনসহ আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত

লাগামহীন ইসরাইলের বর্বরতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:২৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

লাগামহীন ইসরাইলের বর্বরতা

এক টুকরা রুটি খেতে চেয়েছিল এক ফিলিস্তিনি মায়ের শিশু সন্তান। কিন্তু ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জনই সহায়তা প্রার্থী ছিলেন এবং খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় হওয়া হামলায় তারা প্রাণ হারান। রবিবার নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সামনে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

এই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সহায়তা সংস্থা। রাফাহর আল-শাকুশ এলাকায় এই হামলায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরাইলি সেনারা সরাসরি লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের দিকে গুলি চালায়। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগেই এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে মৃত্যুকূপ বা মানব হত্যাযন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছিল। খবর আলজাজিরার।
প্রায় প্রতিদিনই ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে প্রাণের মায়া ত্যাগ করেই ত্রাণ সহায়তা নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন অসহায় ফিলিস্তিনিরা। রবিবারও রাফাহর উত্তরাংশে আল শাকুশ সহায়তা কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। ঘটনার পর নিহতদের স্বজনরা ভিড় করেন খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে। এ  সময় চোখের সামনে সন্তানের লাশ দেখে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়েন এক মা। তিনি বলেন, শুধু এক টুকরা রুটি চেয়েছিল। না খেয়েই মরে গেল আমার বাচ্চা।

আমার পরিবার শেষ হয়ে গেছে। মেয়েটা আইসিইউতে, বাকি পরিবারের সব সদস্য মৃত। এর মধ্যেই আল মাওয়াসিতে ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইল। শরণার্থীদের তাঁবুগুলোর ওপর সরাসরি এ হামলা চালায় নেতানিয়াহু বাহিনী। এতে শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় সহায়তা নিতে গিয়ে গত ছয় সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৯৮ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। সহায়তার নাম করে গুলি চালানোর এই ধরনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

এদিকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন মার্কিন নাগরিক সাইফুল্লাহ মুসল্লেত। ট্যাম্পা, ফ্লোরিডার এই ২০ বছর বয়সি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত হন আরও একজন ফিলিস্তিনি যুবক হুসেইন শালাবি। পরিবারের দাবি, তিন ঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছতে পারলেও ততক্ষণে মারা যান সাইফ। এ ঘটনার তদন্তের কথা জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, মার্কিন প্রশাসন ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হলেও পরিবার ও নিহতের প্রতি সম্মান জানিয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করছে না।

এদিকে হামলা থেকে বেঁচে ফেরা সামির শায়াত নামে এক ব্যক্তি বলেন, যে ব্যাগে খাবার নেওয়ার কথা ছিল সেটাই হয়ে গেল মরদেহ মোড়ানোর কাপড়। ওরা আমাদের নিঃসন্দেহে মৃত্যুফাঁদে ফেলেছে। মোহাম্মদ বারবাখ নামে আরেকজন জানান, গুলি চালিয়েছিল ইসরাইলি স্নাইপাররা। তিনি বলেন, ওরা আমাদের প্রতারিত করে। আগে খাবারের ব্যাগ হাতে দিতে দেয়, তারপর শিকারি যেমন হাঁসকে গুলি করে, তেমন করে গুলি চালায়।

×