
ছবি: সংগৃহীত
অত্যাধুনিক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আর দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল—ইরান এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল ভেঙে দেশটি আজ দাঁড়িয়ে গেছে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সারিতে। এখন যদি তারা পরমাণু কর্মসূচিতে সফল হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টে যাবে বিশ্বশক্তির ভারসাম্য। আর সেই সম্ভাবনাই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে।
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার বার্তা দিল রাশিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করার, অর্থাৎ ‘এনরিচমেন্ট জিরো’ প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কার্যত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করারই নামান্তর।
তবে এই প্রস্তাব নিয়ে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক ধোঁয়াশা। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশিয়ার পক্ষ থেকে এমন একটি কঠোর প্রস্তাব দেওয়া মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক আলোচনার ঝড়। বিশেষ করে, এমন প্রস্তাব পশ্চিমা বিশ্ব ও ইরানের মধ্যে আলোচনার ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে ইরান এই প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আল-মায়াদিনকে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, তেহরান এমন কোনো প্রস্তাব পায়নি যেখানে নিজ ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এমনকি ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচিও জোর দিয়ে বলেছেন,
“আমাদের এমন কোনো চুক্তি হবে না যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি আমাদের বৈধ অধিকার।”
ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি একান্তই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত, এবং সে অধিকারকে রাশিয়াও এতদিন সমর্থন করে এসেছে। এখনো আল-মায়াদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক অবস্থান পরিবর্তন হয়নি।
উল্লেখ্য, ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডে রাশিয়া সরাসরি অংশগ্রহণকারী। দেশটির বুশের পারমাণবিক কেন্দ্রে ২০০-এর বেশি রুশ বিজ্ঞানী কাজ করছেন। পাশাপাশি মস্কো ইরানে নতুন দুটি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণসহ মোট ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করছে। ফলে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনায় কোনো আপস হলে রাশিয়ার স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এর আগে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী মনোভাবের প্রেক্ষাপটে, রাশিয়া এক প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছিল যেখানে ইরানে ৩.৬ শতাংশের বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রাশিয়ায় স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছিল। তবে তখনও ইরান নিজ অধিকার সংরক্ষণের প্রশ্নে ছিল অনড়।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই প্রস্তাব যদি সত্যিও হয়, তবু ইরান তা মানবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, এটি তাদের সার্বভৌমত্ব ও শান্তিপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতির মোড় এখন ক্রমেই জটিল হচ্ছে। রাশিয়া, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই ত্রিমুখী সম্পর্ক—পারমাণবিক চুক্তি, ভূরাজনীতি এবং ভূ-অর্থনীতির কেন্দ্রস্থলে এসে দাঁড়িয়েছে। আর সেই চক্রে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ইরান কি আদৌ পিছিয়ে যাবে, নাকি সামনে চলার দৃঢ় সংকল্পেই গড়বে নতুন ইতিহাস?
শেখ ফরিদ